মার্চ ২৩, ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম
ভোলায় অসহায় দরিদ্র ও অসচ্ছ্বল পরিবারেরকে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে ১২ জন গরিব রিকশা চালককে বিনামূল্যে রিকশা বিতরণ করা হয়েছে।
শনিবার (২৩ মার্চ) ভোলা ইলিশা সড়কের পাশে ফাউন্ডেশনটির নিজস্ব কার্যালয়ের সামনে এসব দরিদ্র পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে দাতব্য প্রতিষ্ঠান কাঞ্চন-ফাতেমা ফাউন্ডেশন এই রিকশা বিতরণ করে। এর আগেও দুই ধাপে ২৪টি রিকশা বিতরণ করে ফাউন্ডেশনটি।
এই নিয়ে ৩৬টি দরিদ্র পরিবারকে এই রিকশা বিতরণ করে। সকালে রিকশা বিতরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মামুন-অর রশিদ, ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজল চন্দ্র শীল, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম, ভোলা প্রেসক্লাবের সম্পাদক অমিতাভ রায় অপু, অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাঞ্চন-ফাতেমা ফাউন্ডেশনের সদস্য সুলতান মাহমুদ মঞ্জিল, সাধারণ সম্পাদক হাসান ইশতিয়াক বাবু।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সদস্য আলতাজুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ জাহানজেব আলম টিটব। এতে উপস্থিত ছিলেন কাঞ্চন ফাতেমা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য আশরাফুল হক সোহেলসহ আরও অনেকে।
একই সময় স্থানীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠান কাঞ্চন ফাতেমা ফাউন্ডেশন উদ্যোগে অসহায় ১২টি পরিবারের মধ্যে বেটারি চালিত রিকশার চাবি হস্তান্তর করেন জেলা আরিফুজ্জামান। ফাউন্ডেশন এই উপকরণ পেয়ে খুশি উপকারভোগী পরিবারগুলো। কাঞ্চন-ফাতেমা ফাউন্ডেশন শুধুমাত্র খাদ্যসামগ্রী দিয়ে দারিদ্র্য নিরসন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন টেকসই উন্নয়ন। তাই অসচ্ছ্বল পরিবারকে রিকশা বিতরণ করে স্বচ্ছ্বলতা ফিরিয়ে আনতে এমন আয়োজন করেছে। কাঞ্চন ফাতেমা ফাউন্ডেশন ২০১৮ সাল থেকে ভোলা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দরিদ্র অসহায় মানুষকে স্বাবলম্বী করার জন্য রিকশা, ভ্যানগাড়ি, সেলাই মেশিন, গরু, ঈদ উপহার, চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করে আসছে।
রিকশা পাওয়া মোহাম্মদ সামসুদ্দীন বলেন, ‘নদীতে আমাকে ৩-৪ ভাঙা দিয়েছে। পরিবার নিয়ে কোনোরকম বেঁড়িবাধের পাড়ে আশ্রয় নিয়েছি। সংসার চালানোর জন্য বাংলা রিকশা চালিয়ে কোনো রকম ভাড়া মেরে কোনো রকম সংসার চালাতাম। বাংলা রিকশার কারণে অনেকে আমার রিকশায় উঠত না। ফলে তিন বেলা ঠিকমতো খেতেও পারতাম না। এখন কাঞ্চন-ফাতেমা ফাউন্ডেশন থেকে আমাকে ব্যাটারি চালিত রিকশা দিয়েছে। এই রিকশা চালিয়ে আমি এখন আয় করবো তা দিয়ে সংসার চালাবো। আশা করি, আগের থেকে বেশি প্যাসেঞ্জার বেশি পাবো।’
ভোলার ধনিয়া এলাকার নবীপুরের রিক্সার ড্রাইভার সোপান বলেন, ‘আগে ভাড়া গাড়ি চালিয়েছি ২০০-৩০০ টাকা কামাই করছি। তাতেও কষ্ট হয়ে গেছে সংসার চালাইতে। এখন ব্যাটারি চালিত রিক্সার মাধ্যমে কামাই করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারমু।’
ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, ‘কাঞ্চন ফাতেমা ফাউন্ডেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। সরকারের পাশাপাশি এ ধরনের সামাজিক কার্যকরসাধারণ মানুষকে নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসে। আমরা আশা করি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান করলে একযোগে কাজ করলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে পারবো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।’
ভোলার সমাজসেবার উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সমাজসেবা সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করে। কাঞ্চন ফাতেমা ফাউন্ডেশন যে কাজটি করছে তার সমাজসেবার কাজই করছে। তাদের কাজের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া নিম্ন-আয়ের মানুষ কিছুটা স্বস্তি নিয়ে বসবাস করতে পারে।’
ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইশতিয়াক বাবু বলেন, ‘সমাজের অসহায় মানুষদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করে যাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতা আজ ১২ জন অস্বচ্ছ্বলদেরকে রিকশা বিতরণ করা হয়। আমরা আশা করি এই অটো রিকশা যারা আজকে পেয়েছে তারা রিকশা চালিয়ে এসব পরিবার স্বাবলম্বী হবে। তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। ভবিষ্যতেও আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’