সোমালীয় জলদস্যুরা এখন পর্যন্ত কোনো মুক্তিপণের বিষয়ে যোগযোগ করেনি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। গণমাধ্যকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মুক্তিপণ মিডিয়ার সৃষ্টি। আমাদের সঙ্গে এখনও তারা মুক্তিপণের ব্যাপারে কোনো যোগাযোগ করেনি।’
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব বলেন, ‘জাহাজটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সীমানা দিয়ে যায়নি। তারপরও তারা (জলদস্যু) অপেক্ষায় ছিল। মতান্তরে অনেক ভিন্নমত আছে। তারা দখলে নেওয়ার পর জাহাজটি নিয়ে সোমালিয়ার দিকে রওনা হয়েছে। আজকে ভোর নাগাদ সোমালিয়ার কাছাকাছি তারা নোঙর করেছে। আমাদের সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি, তারাও যোগাযোগ করেনি। এই মুক্তিপণ আপনাদের সৃষ্টি, মিডিয়ার সৃষ্টি। আমাদের কাছে এখনও কোনো মুক্তিপণ তারা চায়নি, মুক্তিপণের ব্যাপারে কোনো যোগাযোগও তারা করেনি।’
আগের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের আগের অভিজ্ঞতা আছে। জাহানমণি নামের একটি জাহাজ ২০১০ সালে এমন ঘটনার মুখে পড়েছিল। ১০০ দিনের মাথায় জাহাজটি আমরা ফেরত আনতে পেরেছিলাম। এরপর আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল মালয়েশিয়ান জাহাজ আলবেদো। সেখানে আমাদের সাতজন বাংলাদেশি নাবিক ছিল। দুইজন ইরানি, তিনজন ইন্ডিয়ান, দুইজন পাকিস্তানি ও পাঁচজন শ্রীলঙ্কান ছিল। এই আলবেদো জাহাজটিকেও তারা ধরে নিয়ে গেছিল। ধরে নেওয়ার পর মালয়েশিয়ান মালিকপক্ষ বলল, এই জাহাজের কোনো দায়-দায়িত্ব আমাদের নেই। তখন জাহাজটি সেখানে আটকে থাকে, আমরা এখান থেকে কাজ করি। প্রায় আড়াই বছর পর জাহাজটি ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার সময় কিছু লোক মারাও যায়। তবে আমাদের লোকগুলো মারা যায়নি। আমাদের লোকগুলোকে তারা নিয়ে সরিয়ে রাখে। প্রায় ৩ বছর ৪ মাস পরে আমরা নেগোসিয়েশন (মধ্যস্থতা) করে কেনিয়ান আর্ম ফোর্সেস (কেনীয় সেনাবাহিনী) দিয়ে উদ্ধার করে এনেছি।’
রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা চেষ্টায় আছি। আমাদের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কথা বলেছেন। ডিজি শিপিং আমাদের সঙ্গে আছেন। জাহাজের যে মালিক তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। মোটামুটি সবপক্ষের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। আমরা এখনও জানি না তাদের কি দাবিদাওয়া। আমরা যদি জানতে পারি তখন হয়তো এটা কৌশলগতভাবেই আপনাদের (মিডিয়া) পুরোপুরি জানাতে পারব না। গণমাধ্যমে এ ধরনের প্রতিবেদন এলে তারা ওখানে দেখবে। যখন তারা দেখবে সরকার চাপের মধ্যে আছে তখন তারা কিন্তু তাদের ডিমান্ড (দাবি) বাড়িয়ে দেবে।’
খুরশেদ আলম বলেন, ‘যারা এটা নিয়ে নেগোসিয়েশন করবে যেভাবে জাহানমণিকে আনা হয়েছে, যেভাবে আলবেদোকে আনা হয়েছে সে রকম প্রচেষ্টা অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। আশা করি আমাদের যে প্রথম লক্ষ্য নাবিক ২৩ জন এবং জাহাজ মালামালসহ দেশে ফেরত আনা। সেই লক্ষ্য থেকে আমরা বিচ্যুত হব না। আমরা হয়তোবা তাড়াতাড়ি একটা সুসংবাদ দিতে পারব। আপনারা যদি দেখেন জাহানমণি আনতে একশ’দিন লেগেছে, আর মালয়েশিয়ান জাহাজ থেকে সাতজন ক্রুকে আনতে লেগেছে ৩ বছর ৪ মাস। কাজেই সময় একটা ব্যাপার। খুব একটা সেনশেনাল নিউজ হবে সেটা আশা করা ঠিক হবে না।’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালীয় জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে সেটি সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যায় তারা। ওই জাহাজে ২৩ বাংলাদেশি নাবিক জিম্মি অবস্থায় রয়েছে।