নভেম্বর ১৩, ২০২৩, ১১:৫২ এএম
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে ইসি। সে হিসেবে নির্বাচনের জন্য সকল দলের প্রস্তুতির জন্য রয়েছে দুই মাসেরও কম সময়। এরই মধ্যে নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। গঠন করা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও উপ-কমিটি।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান এবং রীতি অনুসারে অভিজ্ঞ সাবেক কোনো আমলাকে কো-চেয়ারম্যান করে দলটির পক্ষ থেকে করা হয় একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। গত তিন জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার সঙ্গে কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচ টি ইমাম। ২০২১ সালের ৪ মার্চ তিনি মারা যাওয়ায় শূন্য হয় পদটি।
গেল বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) গণভবনে অনুষ্ঠিত হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। কিন্তু রীতি অনুসারে কো- চেয়ারম্যান পদে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে ফাঁকা রাখা হয়েছে। বরং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করে ঘোষণা করা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। দলের উপদেষ্টা পরিষদ, কার্যনির্বাহী কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এ কমিটির সদস্য। ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ছাড়াও এ কমিটিতে সম্পৃক্ত হবেন জাতীয় পরিষদের নেতারা। এর বাইরেও নির্বাচন পরিচালনায় করা হয় আরও ১৪টি উপ-কমিটি।
যে কারণে কো-চেয়ারম্যানের পদটি গুরুত্বপূর্ণ
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করেন কো-চেয়ারম্যান। যে কারণে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে পদটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দলের সভাপতি সেটি বিবেচনায় নিয়েই এ পদে কাউকে বাছাই করে থাকেন। কো-চেয়ারম্যান হিসেবে প্রয়াত এইচ টি ইমামের আসনে কে আসীন হবেন সে সিদ্ধান্ত এই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গেই নেয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই পদ কাউকে প্রদান করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এবার আরেক অভিজ্ঞ আমলাকে এই দায়িত্ব প্রদান করা হবে।
যে দায়িত্বগুলো পালন করেন কো-চেয়ারম্যান
দলের সভাপতির সঙ্গে কর্মীদের সমন্বয় করা কো-চেয়ারম্যানের গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন ও মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ; দলীয় প্রার্থীরা যেন কোথাও বাধার সম্মুখীন না হয় তা নিশ্চিত করা; নির্বাচনের কৌশল, নির্বাচনী ইশতেহারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা; কো-চেয়ার নিজে নির্বাচন অংশগ্রহণ করেন না। দেশব্যাপী নির্বাচনী কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে হয় তাঁকে; একই সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ; নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচনী এলাকায় দলীয় প্রার্থীদের রোডম্যাপ নির্ধারণে কার্যকরী ভূমিকা পালনসহ আরও খুঁটিনাটি বেশ কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এবার কো চেয়ারম্যান হিসেবে আলোচনায় আছেন যারা
কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা জানান, এত গুরুত্বপূর্ণ পদে কাকে আনা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় প্রধান নিজেই। তবে ধারণা করা যায় অভিজ্ঞ, বর্ষীয়ান, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয়কারী কোনো দক্ষ ব্যক্তিকেই এ দায়িত্বে আনা হবে। সেই ঘোষণা খুব দ্রুতই আসবে।
এবার এই পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক।
এইচ টি ইমামের মৃত্যুর পর এই পদে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের নাম দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় আসছে। একটা লম্বা সময় বন্ধ থাকার পর এইচ টি ইমামের নির্ধারিত রুমেও বসছেন তিনি। এ সময় তাঁকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনাও প্রদান করা হয়। সারা দেশে বিভিন্ন জেলায় সফর করে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে স্মার্ট কর্নার ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করছেন তিনি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ফোরামে বর্তমানে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি।
এই কো-চেয়ারম্যান পদের জন্য আলোচনায় থাকা অপর ব্যক্তি সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। দলের শীর্ষ নেতারা মনে করেন বয়স ও অভিজ্ঞতায় তিনি যোগ্য হিসেবে বিবেচনায় আসতে পারেন।
এ ছাড়াও কো-চেয়ারম্যান পদের আলোচনায় উঠে আসে আরও একটি নাম। তিনি হলেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। যদিও গণমাধ্যমে তাঁর নাম উত্থাপনের পর বিষয়টি নিয়ে ততটা আশাবাদ ব্যক্ত করেননি তিনি। উল্টো বলেছিলেন, ‘যারা আলোচনায় থাকে না, হঠাৎ করে তেমন কেউ কো-চেয়ারম্যান হয়ে যেতে পারেন।’
এদিকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেত্রী চেয়ারম্যান ও আমাকে সদস্য সচিব করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করেছেন এবং কো-চেয়ারম্যানের পদটি খালি রাখা হয়েছে। কাকে এই পদ দেবেন তা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও তিন বারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন এইচ টি ইমাম। তাঁর মৃত্যুর পর এই পদটি খালি। তাই কো-চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন, দলীয় প্রধান তা জানাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ১৪টি উপ-কমিটি করা হয়েছে এবং আগেও এই সংখ্যক কমিটি ছিল। তবে অনেকে মৃত্যুবরণ করার কারণে এই কমিটির সদস্য হয়তো সংযোজন-বিয়োজন করা হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি দলের গঠনতান্ত্রিক ব্যাপার। এ (কো-চেয়ারম্যান) পদটিতে দীর্ঘ সময় ছিলেন এইচ টি ইমাম। নিঃসন্দেহে তিনি যোগ্য, দক্ষ এবং অভিজ্ঞ। এই পদটিতে কাকে দেয়া হবে সেই দায়িত্ব দলীয় প্রধানকে অর্পণ করা হয়েছে। তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত দিবেন। তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, কো-চেয়ারম্যান পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল একটি পদ। খুব শিগগিরই নেত্রী এটি ঠিক করবেন। অনেকেই আলোচনায় আছেন। সর্বজন স্বীকৃত এমন কেউ আসবেন এই পদে।
কেন্দ্রীয় আরেক নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। তবে কো-চেয়ারম্যানের বিশেষ পদটি শূন্য রয়েছে। এই পদে কে আসছেন সে বিষয়ে সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খুব শিগগিরই এই পদে কেউ আসছেন বলেও জানান তিনি।
দেশের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রথম নির্বাচন পরিচালনার কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক আমলা শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এইচ টি ইমামকে। আমৃত্যু তিনি আওয়ামী লীগের এই গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা এইচ টি ইমাম ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিবও হন তিনি।
সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন হতে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে সেই ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে।