অন্য বছরের তুলনায় এবার আগাম শীতেই কুয়াশার দাপট শুরু হয়ে গেছে। গত মাসের (অগ্রহায়ণ) মাঝামাঝিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কুয়াশা বেড়ে যায়। এতে জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দূরপাল্লার বাসের চালক ও যাত্রীরা।
দূরপাল্লার নৈশকালীন গণপরিবহণের একাধিক চালক দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, শীতে মহাসড়কে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা অনেকাংশে কমে আসে। আর মহাসড়কের কোথায় কতটা ঘন কুয়াশা রয়েছে, তা আগাম জানার কোনো সুযোগ নেই। ফলে পথচারী ও বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না বলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
পঞ্চগড়গামী নাবিল পরিবহন লিমিটেডের চালক ফারুক মিয়া জানান, “কুয়াশায় ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। কুয়াশায় রাস্তা দেখা না গেলে বাস থামিয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করার সুযোগও নেই। ফলে অনেক সময় কুয়াশা বেড়ে গেলে ঝুঁকি নিয়েই ব্যস্ত মহাসড়কে সাইড করে গাড়ি রাখতে হয়। তবে এতেও প্রায়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে।”
দৃষ্টি আক্তার নামে উত্তরবঙ্গের এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি এসময় বলেন, “ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সুবাধে তিনি ঢাকায় থাকেন। বাড়ি রংপুর। শীত আসলেই বাড়িতে যাওয়া লাগে। কিন্তু শীতের সময় কুয়াশার কারণে বাড়ি পৌছাতে অনেক দেরী হয়। কারণ দূরপাল্লার বাসগুলো তখন সামনে কি আছে তা দেখতে পারেনা। অধিকাংশ দূরপাল্লার বাসে নেই কোন পাওয়ারফুল লাইট। ফলে চালকরা পরে বিপদে। শীত আসলেই মহাসড়কে বাড়ে দূর্ঘটনা।
গাইবান্ধা থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের চালক আশরাফুল বলেন, “উত্তরবঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। ফলে মধ্য রাত থেকেই সড়কে সামনে হালকা দেখা গেলেও আনুমানিক ১০ মিটার পরেই কুয়াশায় হারিয়ে যায় সড়ক। আর তাই গাড়ি চালাতে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। কাজ হচ্ছে না ফগলাইটের আলোয়। তাই গন্তব্যে পৌছাতে ডাবল সময় লাগছে।”
ফায়াজ হাসান নামে গাইবান্ধার এক যাত্রী বলেন, “দূর্ঘটনা এড়াতে কুয়াশায় সড়কে গাড়ির গতি কমিয়ে চালানো হয়। ঢাকা আসার সময় বাড়ি থেকে কাউন্টারে আসার জন্য বের হয়েছি ১ ঘণ্টা আগে। আবার এখন ঢাকা এসে পৌঁছাতেও দেরি হলো কারণ মধ্যরাতে কুয়াশার জন্যে গাড়ি ধীর গতিতে চালিয়েছে চালক।”
গণপরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, কুয়াশা হলে কত কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলবে, হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এর কোনো নির্দেশনা নেই। দেশের সড়ক-মহাসড়কে নেই প্রয়োজনীয় সাইন ও সংকেত। এছাড়া প্রায় ৮০ শতাংশ যানবাহনের ফগ লাইট নেই। ফলে কুয়াশায় অতিরিক্ত গতি হলেই যান চালিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে যানবাহন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নিজস্ব জরিপ বলছে, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক আছে ৮ হাজার ৮৬০ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার সড়কে যথাযথ সাইন-সংকেত নেই। কোথাও কোথাও আবার রয়েছে কিন্তু তা ত্রম্নটিপূর্ণ। অর্থাৎ ৬২ শতাংশ সড়কে যথাযথ সাইন-সংকেত নেই। ফলে কুয়াশায় যানবাহন চলাচলে হয় সমস্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে ইটভাটা চালু হয় ও নির্মাণকাজ বেড়ে যায়। এতে বাতাসে বিপুল পরিমাণ সূক্ষ্ম বস্তুকণা জড়ো হয়। কুয়াশার সঙ্গে এগুলো মিশে তৈরি হচ্ছে ধোঁয়াশা। এ পরিস্থিতিতে বায়ুদূষণ যেমন বাড়ছে, তেমনি কমে আসছে দৃষ্টিসীমা। ঘন কুয়াশার এমন দিনগুলোতে বিমান, সড়ক, নৌ ও রেলপথের যাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে রাস্তার সংখ্যা কম থাকায় এবং একই গন্তব্যের বিকল্প রাস্তা না থাকার কারণে কুয়াশা হবে জেনেও সেগুলোতে যান চলাচল বন্ধ করা যায় না বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্মকর্তা শেখ মাহবুব-ই-রাব্বানী।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে বিকল্প রাস্তা না থাকায় কুয়াশার কারণে রুট পরিবর্তন কিংবা যানবাহন বন্ধ করা যায় না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “কুয়াশা বাড়লে সড়কে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। শীতে কুয়াশার সাথে যোগ হয় ধুলা এবং গাড়ির ধোঁয়া। এগুলোও আবার কুয়াশায় রূপ নেয়। উন্নয়নকাজ বেড়ে যাওয়ায় ধুলাবালু বাড়ছে। ফলে কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। তাই আমরা অবৈধ ইটভাটাগুলো ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নির্মাণকাজ তদারককারী সংস্থাগুলোকে ধুলা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছি।”