বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরও থেমে থাকেনি ষড়যন্ত্র। এরপর কারাগারে আটক আওয়ামী লীগের জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করা হয়। লক্ষ্য ছিল দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুরোপুরি মুছে ফেলা।
এরকম একটি ক্রান্তিকালে বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। তৎকালীন সেনা শাসকেরা দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করে স্বৈরশাসন চালু করে। এতে হুমকির মুখে পড়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটি।
পঁচাত্তরের ওই পট পরিবর্তনের পর দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক এই দলের যখন নাজুক দশা, ঠিক তখনি নেতৃত্ব বাছাই করতে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ৩দিনব্যাপী কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই সময় শেখ হাসিনা ভারতের দিল্লিতে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন।
দলীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়েই দেশের মাটির টানে দীর্ঘ পরবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। অবশেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
এদিন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন লাখো নেতা-কর্মী-সমর্থক। গণমানুষের হৃদয় ছোঁয়া এমন ভালবাসার জবাবে শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।
চারদশক আগের এই দিনে শেখ হাসিনা দেশে ফিরেই শুরু করেন গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। এতে ভীত হয়ে তাকে হত্যার জন্য একের পর এক চেষ্টা চালায় স্বৈরশাসক ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে গঠিত সরকারগুলো।১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েই শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার অসমাপ্ত কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার এই পথচলা খুব সহজ ছিল না। নানা বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করতে হয়েছে তাঁকে। ষড়যন্ত্রকারীরাও বিভিন্ন সময় তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট দলীয় কার্যালয়ের সামনে তার জনসভায় গ্রেনেড হামলার স্মৃতি এখনও গণমানুষের মনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে আছে।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট জয়লাভ করে আবারও সরকার গঠন করে।
তখন থেকে আজ অবধি শেখ হাসিনা নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তার স্বপ্ন, বাংলাদেশকে একটি উন্নত, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা।