ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩, ০৮:১৭ এএম
বাংলাদেশের নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যম এবং সাংবাদিকরা মামলা, হয়রান, ভীতি প্রদর্শনের শিকার হচ্ছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইন্সটিটিউট (আইপিআই)। তারা একটি বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে, কয়েক বছরে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় ক্রমবর্ধমান হারে চাপ বেড়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘন হয়েছে কমপক্ষে ৩০টি। এ বিষয়টি প্রামাণ্য আকারে উপস্থাপন করেছে আইপিআই।
এছাড়া সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম দুই বছর ধরে আর্থিক লেনদেনে নজরদারিসহ সরকারের অব্যাহত হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছেন এ নিয়েও বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়েছে আইপিআই। তারা জানায়, আর্থিক লেনদেন মনিটরিংসহ তীব্র হয়রানির মুখোমুখি রোজিনা ইসলাম ও তাঁর পরিবার। তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে এবং হয়রান করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনলাইনে তাঁকে টার্গেট করেছে।
আইপিআই ডট মিডিয়াতে ১০ ফেব্রুয়ারি এই বিবৃতিটি প্রথমে প্রকাশ করা হয়েছিল। পরে ১৭ই ফেব্রুয়ারি আইপিআইয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এতে দুর্নীতিবিরোধী সুপরিচিত সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, কর্তৃপক্ষকে সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। জনস্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রিপোর্ট করা সাংবাদিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। করোনা মহামারিকালে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য তিনি সুপরিচিত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পরিদর্শনের সময় ২০২১ সালের ১৭ মে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন কর্মকর্তারা দাবি করেন, মোবাইল ফোন দিয়ে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ টিকা কেনা নিয়ে ডকুমেন্টের ছবি তুলেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে আটক দেখানোর আগে বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ৬ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। সেখানে তিনি শারীরিক এবং মৌখিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। তাঁর ফোন, পাসপোর্ট এবং ব্যক্তিগত অন্যান্য জিনিসপত্র জব্দ করে পুলিশ।
পুরস্কারবিজয়ী এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের কারণে নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন ঝড়ো সমালোচনা করে। অবশেষে ২০২১ সালের ২৩ মে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এক বছর পর ২০২২ সালের ৩ জুলাই তাঁর মামলায় একটি চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এতে তাঁকে বেকসুর খালাস দেয়ার অনুরোধ করা হয়। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁকে সমর্থন করার মতো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি এবং বহুল বিতর্কিত ১৯২৩ অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের অধীনে চুরি এবং রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর ডকুমেন্টের ছবি তোলার অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগে তার ১৪ বছরের জেল হতে পারে অথবা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
বিবৃতির মাধ্যমে তথ্যপ্রমাণের অভাবে পুলিশের ওই রিপোর্টে রোজিনা ইসলামকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়া উচিত বলে সুপারিশ করা হয়। পুলিশের এই চূড়ান্ত রিপোর্টের সাত মাসেরও বেশি সময় পর ২৩শে জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমান ওই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে একটি পিটিশন করেন এবং আদালতের কাছে তদন্ত পুনরায় করার দাবি জানান। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট (সিএমএম) তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর সেই আবেদন গ্রহণ করেন।
আইপিআই হেড অব এডভোকেসি অ্যামি ব্রুলেতি বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানায় আইপিআই। তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বহু বছরব্যাপী আইনগত প্রক্রিয়া এবং তাকে হয়রানির ফলে বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর শীতল প্রভাব ফেলে। দেশের নিরপেক্ষ মিডিয়া কী বিস্তৃত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, এই মামলা তাও তুলে ধরে। যেসব সাংবাদিক সরকারের দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করেন, তারা ঝুঁকিতে আছেন। তাদের ভীতি প্রদর্শন এবং কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করছে প্রাচীন আইন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায়। সেন্সরশিপ এবং নজরদারিসহ অব্যাহত শারীরিক হামলা, হুমকি, আইনি হয়রানি এবং গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হচ্ছেন সাংবাদিকরা।