মিরপুর ১১ নম্বর সেকশন সংলগ্ন প্যারিস রোডে নির্মিতব্য নিউ ঢাকা সিটি করপোরেশন মার্কেটের কাজ আজও শেষ হল না। প্রকল্প নেওয়া হয় ৩৮ বছর আগে। এরপর গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে প্রকল্পের কাজ। মাঝে বেশ কয়েকবার বন্ধও হয়েছে নির্মাণ কাজ। কিন্তু প্রকল্পের কাজ আর শেষ হয় না। কাজ না হলেও দোকান বরাদ্দের নামে এই সময়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। সময়মতো মার্কেট না হওয়ায় অনেক জায়গা ইতিমধ্যে বেদখলও হয়ে গেছে। দোকান মালিকরা অভিযোগ করে বলেছেন, সিটি করপোরেশনের অবহেলাই এ জন্য দায়ী।
মার্কেট কমিটির সূত্রে জানা যায়, মার্কেটের জন্য ১৯৮৪ সালে ছয় বিঘা জায়গা বরাদ্দ দেয় গণপূর্ত বিভাগ। নকশা অনুযায়ী জমির ওপরে ছয়তলা মার্কেট ভবন নির্মাণ হওয়ার কথা। জায়গাটির সামনের দিকের একটি অংশে আছে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের কিছু পরিবার। তাই নকশার এ অংশ বাদ রেখে এবং কোনো রকম সীমানা প্রাচীর না তুলেই ১৯৯৪ সালে মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। সে সময় দোকানের মূল্য ধরা হয় ৫ হাজার টাকা করে। আর কিস্তি ধরা হয় ৩ হাজার, ২ হাজার ও ১ হাজার টাকা। ১৩২৫ টি দোকান তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর ৭৫০টি দোকানের টাকা জমা নেওয়া হয়। তবে নির্মাণকাজ চলার একপর্যায়ে ঠিকাদারদের সাথে সিটি করপোরেশনের বিরোধ দেখা দিলে ১৯৯৮ সালে মার্কেটের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ২০০৪ সালে ফের নির্মাণকাজ শুরু হয়। চারপাশের দেয়াল নির্মাণ ও ছয়তলা ভবনের কাঠামো তখন নির্মাণ হয়। তবে ১৯৯৪ সালে সিঙ্গেল দোকানগুলোর বেশিরভাগকে দুই ভাগে ভাগ করে সিটি কর্পোরেশন। এরফলে ২০০৪ সালে দোকানের সংখ্যা হয় ২৩৬৩ টি। সে সময় দোকানের মূল্য ধরা হয় ৯০ হাজার টাকা। তারপর সিটি কর্পোরেশন থেকে একটা হলফনামা তৈরি করা হয়। যে হলফনামায় বলা হয়, লটারির মাধ্যমে যার দোকান যেখানে পড়বে তাকে সেখানেই দোকান নিতে হবে। এ ব্যাপারে কোন আইনের সহায়তা নেওয়া যাবে না। তখন সেই হলফনামার বিরোধিতা করে দোকান মালিকরা।
সেই বিরোধিতার পর দোকান মালিকদের বাদ দিয়ে বহিরাগত প্রবেশ করানোর অভিযোগ আছে সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে। দোকানমালিকদের দাবি, ২৩শ দোকানের জন্য সিটি কর্পোরেশন ১০ হাজার ফর্ম বিক্রি করেছে। যার কারণে তাঁরা সিটি কর্পোরেশনের বিরূদ্ধে মামলা করে। এর পরই আবার বন্ধ হয়ে যায় কাজ।
এরপর ২০১১ সালে সিটি করপোরেশন বিভক্ত হলে মার্কেটের দায়িত্ব পায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মার্কেটের নতুন নাম হয় নিউ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মার্কেট। ডিএনসিসি তার ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল বিভাগের মাধ্যমে মার্কেটের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এরপরের ১১ বছরেও মার্কেটের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করতে পারেনি ওই সার্কেল।
শুরুতেই দোকান নেওয়ার জন্য বুকিং দিয়েছিলেন এমন একজন হলেন গোলাম ফারুক চৌধুরী। ফারুক এখনও দোকানের দেখা পাননি। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘সেই সময় পর্যন্ত ৯৫ হাজার টাকা দিয়েছি। টাকা দেওয়ার পরও প্রায় ২৫ বছর পার হয়ে গেছে। কোনো আশা দেখছি না দোকান পাওয়ার। আমরা তো সরকারি বিজ্ঞপ্তির সাথে সাথে টাকা জমা দিয়েছিলাম। এরপর লাগলে আরোও দিতাম। তবুও মার্কেট হোক। কিন্তু ওইখানে এখন মদ-গাঁজাসহ মাদক দ্রব্যের হাট বসে। আমরা চাই সিটি কর্পোরেশন থেকে সরাসরি এসে যারা প্রকৃত দোকানদার তাদেরকে জরিপ করুক।’
উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিরূদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুললেন মার্কেটের সাধারন সম্পাদক গোলাম আজম সিদ্দিকী। তিনি দ্য রির্পোট ডট লাইভকে বললেন, আমরা মেয়রের সাথে দেখা করার জন্য তিন-চারবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু মেয়রের তরফ থেকে কোনো আগ্রহ দেখি না। সিটি কর্পোরেশনে আমাদের মার্কেটের কোন প্রতিনিধিরই মূল্যায়ণ নেই। ওনারা মনে করেন যে, এটি সিটি কর্পোরেশনের মার্কেট। কিন্তু এটি সিটি কর্পোরেশন মার্কেট নয়, সিটি কর্পোরেশন শুধু এই মার্কেট বানিয়ে দেবে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেওয়া সম্পূর্ণ মেয়র সাহেবের অবহেলা কারণ। মেয়র সাহেব এখানে তিনবার এসেছেন। আসার পর মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যান শুধু।
তবে দূর্ঘটনার আশংকা দেখা দেওয়ায় মার্কেট চালু করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমি দায়িত্বে আসার পর ইন্জিনিয়ার এনে এখানে পরীক্ষা করিয়েছি। পরীক্ষা করার পর তাঁরা জানিয়েছেন, এই মার্কেটের যে পাইলিং হয়েছে তা ছয় তলার লোড নিতে পারবে না। পাশাপাশি এটার ডিজাইনেও অনেক ভূল রয়েছে। মাল লোড-আনলোড করার কোন ব্যবস্থাও নেই। মার্কেটটা শুরু হলে ওখানে যেকোন ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। তাই এখনো মার্কেটটা চালু করা সম্ভব হয়নি। আমাদের এখনো এ বিষয়ে কোন প্লান তৈরি হয়নি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ করবো।
মার্কেট কমিটির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের কাছে দাবি করেন, আমরা তাদেরকে প্রস্তাব দিয়েছি বসার জন্য, কিন্তু তাঁরাই আসেনি। তাঁরা আসুক, আমি কথা দিচ্ছি মার্কেট ভাঙা বা সংস্কার যেটাই প্রয়োজন হোক আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তা করে দেবো। পাশাপাশি আমরা প্রত্যেকটা মর্কেটের ব্যাপারে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছি।