সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৬ জুন) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এই মানববন্ধন করে তারা। কর্মসূচিতে বক্তারা সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবি জানান।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আঠারোর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘মেধাভিত্তিক নিয়োগ চাই’, ‘প্রতিবন্ধী ছাড়া কোটা নাই’, ‘সব কোটা বাতিল হোক, মেধাবীদের চাকরি হোক’- প্রভৃতি সম্মিলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
মানববন্ধনে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, “আমি নিজে একজন শারীরিক অক্ষম ব্যক্তি, কিন্তু তবুও আমি এই কোটার বিরোধিতা করছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ও কোটায় আমার বিষয় এসেছিল। কিন্তু আমি কোটায় ভর্তি না হয়ে আমি সাধারণ মেধা তালিকায় ভর্তি হয়েছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নই, আমরা চাই তারা তাদের প্রকৃত সম্মান পাক। তবে আমরা চাইনা তাদের কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হোক।”
আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, “আমি একজন নারী হওয়ায় প্রথম শ্রেনীর চাকরিতে আমার জন্য কোটা বরাদ্দ আছে, তবুও আমি এই কোটার বিরোধিতা করছি। কারণ আমার মধ্যে যদি মেধা-দক্ষতা থাকে তাহলে নিজ যোগ্যতায় আমি চাকরি অর্জন করতে পারবো। বাংলাদেশের সব মেয়ের সেই সক্ষমতা আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনো কোটার মাধ্যমে দেশ শাসনে আসেনি। তিনি নিজ যোগ্যতায় এখানে এসেছেন। এখানে আসার জন্য তার কোনো কোটার দরকার হয়নি।”
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নিকট আহ্বান সরকার এমন কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না যে সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করতে চান তাহলে তাদের স্বর্ণখচিত আবাসনের ব্যবস্থা করে দেন, তাদেরকে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা সম্মানি দেন বাংলাদেশের কোনো ছাত্র সমাজ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে না। তবে ছাত্রসমাজ সাধারণ শিক্ষার্থীর মেধার ক্ষেত্রে এই ধরনের কোটার বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলবে।”
পপুলেশন সাইন্স বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আমানুল্লা আমান বলেন, “২০১৮ সালে ঢাবি, রাবি, চবি সহ সারা বাংলায় কোটার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের গণআন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যদি সোনার বাংলা গড়তে হয় তাহলে কোটা প্রথা বিলপ্ত করা হবে। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল হাইকোর্টে রিট করে আবারও কোটা ব্যবস্থা চালু করেছে। যা মুক্তিযু্দ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক, এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমরা আমাদের বাবা মায়ের ধান বিক্রির টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি। আমাদের পিতামাতার স্বপ্নকে নিয়ে কোন ছেলে খেলা আমরা কখনোই মানবো না।”
কর্মসূচিতে অর্থনীতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এহসানুল মারুফের সঞ্চালনায় বক্তারা বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
গত বুধবার বাংলাদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় দেয় হাইকোর্ট। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের দুই শ্রেণিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত।