আগস্ট ২১, ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
অনভিপ্রেত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “একটা অনভিপ্রেত ঘটনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সারা দেশে এখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারিনি। টেস্ট, প্রি-টেস্টের মূল্যায়নপত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আরও চিন্তা-ভাবনার অবকাশ ছিল এবং সেটা হলে আরও ভালো হতো।”
তিনি আরও বলেন, “আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের যুক্তি ছিল তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এত বড় একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর পরীক্ষার হলে বসা একটা মানসিক চাপ। এটা তারা বলেছে। কিন্তু এই চাপে যারা আছেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থী সারাদেশে ১২-১৩ লাখ, তাদের সবার মতামত তো যাচাই করার সুযোগ হয়নি। পরে বিবেচনা করেছি, এমন পরিস্থিতি যে আমরা এখনো শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারিনি। গতকাল তারা যেভাবে সচিবালয়ে আন্দোলন করেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক।”
উপদেষ্টা যোগ করেন, “এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর যে অবস্থা, অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেক কাগজপত্র নষ্ট হয়েছে। সেসব জায়গায় শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বোধ করবে কিনা, দুই পক্ষ থাকলে বিশৃঙ্খলা হবে। আরও বড় কথা হলো, প্রশ্নপত্রগুলোর গোপনীয়তা, কে যে কখন কী করে ফেলে, পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলতে পারে। এসব (পরীক্ষা) নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আছে। আমি নিজে চেয়েছিলাম সময় নিতে, আরও বিচার-বিবেচনা করতে।”
শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষাক্রমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। ২০২১ সালের আগের যে বইগুলো আছে সেগুলো ছাপানো হবে। সেখানে বইয়ের কিছু টেক্সট পরিবর্তন করা হবে। ১ জানুয়ারির মধ্যে বই দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।”
এ সময় “অনেক জায়গায় বলপ্রয়োগ করে শিক্ষকদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটা দৃষ্টিকটু” বলেও মন্তব্য করেন ওয়াহিদউদ্দিন।
আরও পড়ুন: এইচএসসি পরীক্ষা ফেরাতে এবার আন্দোলনে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা
এদিনই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ফেরাতে আন্দোলনে নামেন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুর দুইটায় কলেজের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন তারা। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার পরীক্ষার্থীদের দাবির মুখে স্থগিতকৃত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় তাদের অবরোধের মুখে যৌক্তিক সমাধানের আশ্বাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এদিকে এইচএসসির স্থগিত হওয়া পরীক্ষা বাতিলে ক্ষোভ প্রকাশ করেনছেন দুই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।
মঙ্গলবার রাতে ব্রিফিংয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “সবাইকে অবরুদ্ধ করে পরীক্ষা বাতিলে বাধ্য করা হয়েছে।”
আরও পড়ুন: এইচএসসি, সমমানের বাকি পরীক্ষা বাতিল
একই সময় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক নয়। বিভিন্ন গোষ্ঠী রূপ বদলে অযৌক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলনে নামছে। তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। তাদের আন্দোলনের পথ সঠিক নয়।”
আরও পড়ুন: অটোপাশের দাবিতে সচিবালয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
এদিনই দুপুরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে অর্ধেক প্রশ্নোত্তরে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টিও জানানো হয়।
আরও পড়ুন: আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে যাবে এইচএসসি
গত ৩০ জুন সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮, ২১, ২৩ ও ২৫, ২৮ জুলাই এবং ১ ও ৪ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সবশেষ ১১ আগস্ট থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে সেটাও স্থগিত করা হয়।