জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় দ্বীন ইসলাম ও আম্মান ছাড়াও বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেছেন তার মা তাহমিনা শবনম।
গতকাল শুক্রবার (১৬ মে) মধ্যরাতে কুমিল্লার বাগিচাগাঁও এলাকার বাসায় বিলাপ করতে করতেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় ‘আমি তো কোনোদিন কারও কোনো ক্ষতি করিনি। আমার এত বড় ক্ষতি কি করে হলো’ বলে মূর্ছা যেতে থাকেন তিনি। বলতে থাকেন, ‘গত রোজায় সরকারি কলেজের অধ্যাপক স্বামীকে হারালাম। এবার মেয়েকে হারালাম। এক বছরের মধ্যে স্বামী ও মেয়ে আমার কাছ থেকে চলে গেল। মেয়ে আমার বিচারক হতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা তাকে বাঁচতে দিলো না। ও সাহসী মেয়ে ছিল। বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলো।’
এদিকে অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যা দাবি করে অবন্তিকার মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আম্মান, রাফি, মাহিয়ান, লাকি, রিমি, আঁখি, বন্যা ও দ্বীন ইসলাম আমার মেয়ের জীবনটাকে বিষিয়ে তুলেছিল। তারা বিভিন্নভাবে আমার মেয়েকে হয়রানি করে আজকের অবস্থার সৃষ্টি করেছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে অভিযাগ করেও কাজ হয়নি জানিয়ে অবন্তিকার মা বলেন, ‘যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে গিয়েও আমার মেয়ে কোনো বিচার পায়নি। উল্টো তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে, অপমান করা হয়েছে। আমার মেয়ে বিচার পেলে আজকের দিনে তাকে চলে যেতে হতো না।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘আমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টর সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, বিষয়টির সুরাহার জন্য। আমার মেয়ে যাতে ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করতে পারে, সেটা আর হলো না। তাদের জন্য আমি মেয়ে হারিয়েছি, আমি তাদের বিচার চাই।’
এদিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফাইরুজ আবন্তিকা নামে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে মধ্যরাতেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাদের দাবির বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
এরই মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীকে সাময়িক বহিষ্কার ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা জেলা সদরের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। পরে তাকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, ফাইরুজ আবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আত্মহত্যার চেষ্টা করার আগে ফেসবুকে দেওয়া দীর্ঘ এক পোস্টে এ ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করেছেন তিনি।