বিশ্বে প্রতি বছর গড়ে ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলেও বেশির ভাগই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়, তবে যেসব ঝড় উপকূল বা স্থলভাগে আঘাত হানে সেগুলো ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়গুলোর বেশির ভাগই আঘাত হেনেছিল বাংলাদেশে।
ইতিহাসের বিধ্বংসী ১০টি ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এই আলোচনা-
ভোলা সাইক্লোন
ইতিহাসের ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা হয় ভোলা সাইক্লোনকে। ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় সাইক্লোন। এতে প্রাণ হারায় অন্তত ৫ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে ১ লাখই ছিল জেলে। জলোচ্ছ্বাসে বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়।
হুগলি রিভার সাইক্লোন
ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাসে ১৭৩৭ সালের ভয়ঙ্কর হুগলি রিভার সাইক্লোন বা ক্যালকাটা সাইক্লোন অন্যতম। এই সাইক্লোনের ধ্বংস লীলা ছিল ভয়াবহ। কলকাতার শহরের দক্ষিণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রায় ৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারান এই ঝড়ে।
হাইফোং টাইফুন
ভিয়েতনামের হাইফোং শহরে ১৮৮১ সালের অক্টোবরে টাইফুন আঘাত হানে। দেশটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করেছে। সেবার ভিয়েতনামে প্রায় ৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।
বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন
১৫৮৪ সালে ৫ ঘণ্টাব্যাপী ঘূর্ণিঝড়ে তদানীন্তন বাকেরগঞ্জে বর্তমান পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলার উপকূলের দুই লাখ মানুষ প্রাণ হারান।
কোরিঙ্গা ঘূর্ণিঝড়
১৮৩৯ সালের কোরিঙ্গা ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল অন্ধ্র প্রদেশের কোরিঙ্গায়। ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর এই ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু হয়েছিল ৩ লাখ মানুষের।
দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন
বরিশালের বাকেরগঞ্জে ১৮৭৬ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। ভয়াবহ সেই ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ। বাতাসের তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার, আর সমুদ্রের পানি বয়ে যাচ্ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২০ ফুট ওপর দিয়ে। অনাহার ও দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রাম সাইক্লোন
১৮৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম অঞ্চলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়, যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কুতুবদিয়া দ্বীপ। ঝড়ে প্রাণ হারান পৌনে দুই লাখ মানুষ।
নিনা টাইফুন
১৯৭৫ সালে চীনের হেনান প্রদেশে আঘাত হেনেছিল টাইফুন নিনা। যার ভয়াবহতায় প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ। নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ।
ম্যারিয়েন ঘূর্ণিঝড়
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে এই ঘূর্ণিঝড়। ফলে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। প্রাণ হারায় প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। বাস্তুহারা হয়ে পড়ে ১ কোটিরও বেশি মানুষ।
নার্গিস
২০০৮ সালের মে মাসে মিয়ানমারে আঘাত হানে নার্গিস। এর তাণ্ডবে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। সাড়ে ৪ লাখ ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।