চলছে তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আর এই নির্বাচনের ‘নায়ক’ দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোয়ান। অসামান্য ব্যক্তিত্ব আর প্রভাব সৃষ্টির শৈলী দিয়ে ২০ বছর ধরে তুরস্কের রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন তিনি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এই প্রথম সবচেয়ে কঠিন এক পরীক্ষার মুখে পড়তে যাচ্ছেন রিসেপ তাইপে এরদোয়ান।
নির্বাচনে এরদোয়ানসহ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মোট ৩ জন। বাকি দুজন হলেন কামাল কিলিচদারোগলু ও সিনান ওগান। দেশজুড়ে অসংখ্য ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন প্রায় সাড়ে ৬ কোটি তুর্কি নাগরিক।
তিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেবেন তাঁরা। নির্বাচনে মোট ২৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। পার্লামেন্টের ৬০০ আসনের বিপরীতে লড়াই করছেন ১৫১ স্বাধীন প্রার্থী।
বিরোধীদের অভিযোগ, এরদোয়ানের দুই দশকের শাসনামলে তুরস্ক ক্রমেই একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে— বিরোধী প্রার্থীর চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন এরদোয়ান।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আলজাজিরার প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এরদোয়ান যদি এবার ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়েন, তবে তা হবে তাঁর অর্থনৈতিক নীতিমালাজনিত কয়েকটি ভুল পদক্ষেপের কারণে।
এরদোয়ান ও তাঁর একে পার্টির প্রথম এক দশকের শাসন মেয়াদে তুরস্কে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জন হতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী দশক থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। মুদ্রার মান কমে যাওয়া এবং জীবনযাপনের খরচ বেড়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছরে এরদোয়ানের প্রতি মানুষের সমর্থন কমতে দেখা গেছে। তবে তাঁর জনপ্রিয়তা কমার এ প্রবণতা শুরু হয়েছে মূলত ২০১৩ সাল থেকে।
ওই বছর তুরস্কজুড়ে এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হতে দেখা গেছে, বিরোধীদের ওপর ধরপাকড় চালানো হয়েছে। এ ছাড়া বৈশ্বিক সংকটের কারণে তুরস্ক এবং অন্য উদীয়মান বাজারগুলো তহবিল-সংকটে পড়ে।
তবে জনমত জরিপ বলছে, রক্ষণশীল ও জাতীয়তাবাদী গ্রামীণ শ্রমজীবী শ্রেণির কাছে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন এরদোয়ান। তিনি ও তাঁর ক্ষমতাসীন জোটের এখনো প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে জেতার সুযোগ আছে।
তুরস্কের নির্বাচনি বিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে এককভাবে ৫০ শতাংশ বা এর বেশি ভোট পেতে হবে। এমনটি যদি না হয় তাহলে যে দুজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তাদের মধ্যে দুই সপ্তাহ পর রানঅফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।