‘বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর খবর শুনে মাথা কাজ করছিল না!’

জিন্নাত আরা জশোয়া

আগস্ট ১৫, ২০২৩, ০৯:৫২ এএম

‘বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর খবর শুনে মাথা কাজ করছিল না!’

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বড় বোনের ছেলে রাজনীতিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বড় বোনের ছেলে রাজনীতিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সাথে কাটিয়েছেন বহুবছর। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্মৃতিচারণ করেন বঙ্গবন্ধু পরিবার ও ১৫ আগস্ট নিয়ে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন জিন্নাত আরা জশোয়া।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ: ১৫ আগস্ট আপনি কোথায় ছিলেন? শেষ কবে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সাথে আপনার দেখা হয়?

শেখ শহীদুল ইসলাম: বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে আমার আবাল্য সম্পর্ক। আমি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন থেকেছি। ১৪ আগস্ট রাতে শেষ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সাথে আমার দেখা হয়। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আসার কথা ছিল। যখন জানতে পারি বঙ্গবন্ধু আর নেই, আমরা সকলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম।  আমার মাথা কাজ করছিল না।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ: প্রথমেই কি জেনেছিলেন পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে?

শেখ শহীদুল ইসলাম: বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর প্রথমে জানতাম না যে পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। নিজের বিপদ জেনেও, আত্মীয়কে নিয়ে ৩২ নাম্বার বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করি। তবে ৮ নাম্বার-এর কাছাকাছি যাওয়ার পর আনসাররা আটকে দেয়। পরে ধীরে ধীরে জানতে পারি শুধু বঙ্গবন্ধুর ৩২ নাম্বার বাড়িতে নয়, শেখ মণির বাড়ি ও সেরনিয়াবাত বাড়িতেও হামলা করা হয়।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ: কয়েকবছর বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে থেকেছেন, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সাথে স্মৃতিময় কোনো মুহূর্তের কথা স্মরণ করতে চান?

শেখ শহীদুল ইসলাম: ঢাকায় এসে পড়াশোনা ও রাজনীতি করতে গিয়েও ১৯৬২ সাল থেকে ৭৫ পর্যন্ত সময়কালে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে থেকেছি। এ সময়ও খালা-খালুর স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি। শেখ কামালের সাথে বড় একটা সময় কাটে। তারা শেখ কামাল এবং আমাকে আলাদা করে দেখতেন না।

আমাদের অনেক মজার ঘটনা আছে।  রাতে ৩২ নাম্বার বাড়িতে নিয়ম ছিল সবাই একসঙ্গে খাওয়ার আমি ও কামাল যখন মাঝেমধ্যে দেরি করে ঘরে ফিরতাম। বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতাকে বলতেন কামাল কোথায় শহীদুল কোথায়? ওরা তো আমার চেয়েও বড় রাজনীতিবিদ হয়ে গিয়েছে, ওদের তো দেরি হবেই৷

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ:  বঙ্গবন্ধুর কাছে রাজনৈতিক জীবনের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?

শেখ শহীদুল ইসলাম: বঙ্গবন্ধু আমাকে এতটাই স্নেহ করতেন, আমার রাজনৈতিক জীবন শিক্ষা জীবন সব দিকে আমি তার থেকে অনুপ্রেরণা পেতাম। আমার বর্তমান রাজনৈতিক জীবন বলেন বা পুরো জীবনের যেকোন শিক্ষাই ভাবেন সবটাই কিন্তু বঙ্গবন্ধুর থেকে শেখা। আমার জীবনের প্রথম ঘড়িও আমাকে বঙ্গবন্ধু উপহার দিয়েছিলেন সুইজারল্যান্ড থেকে।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ: বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও দৃঢ় মানসিকতা, ত্যাগ, সবই আমাদের মোটামুটি জানা। পরিবারের গণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বিচরণ কেমন ছিল?

শেখ শহীদুল ইসলাম: বঙ্গবন্ধু পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারেননি দেশ ও জাতির মুক্তির কথা চিন্তা করে। তবে পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষকে দেশ ও জাতির কথা ভাবতে বাধ্য করেছেন। বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর পুরো রাজনৈতিক জীবনে শক্ত হাতে পাশে থেকে সংসারের হাল ধরেছেন, যেকোনো বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন। আজ বর্তমান বাংলাদেশে যতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করা হলে আরও ২০-২৫ বছর আগেই এসব উন্নয়ন সম্ভব হতো। 

Link copied!