অনুদানের টাকা পাননি অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা

মীর ইফতেখারুল হাসান

এপ্রিল ১৬, ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম

অনুদানের টাকা পাননি অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা

খান খান হয়ে গেছে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যত। ছবি: দ্য রিপোর্ট.লাইভ

ঈদের পরেই বঙ্গবাজার মার্কেটের বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পাঁচদিনের ব্যাবধানে গতকাল সোমবার (১৫ এপ্রিল) পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের দোকানপাট ভেঙে ফেলায় বিপাকে পড়েছেন অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা। চাঁদরাতের আগেই অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের অনুদানের টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেই টাকা এখনও পাননি বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। উপরন্তু ঈদের পর হঠাৎ করেই বঙ্গবাজার ভেঙে ফেলায় মালপত্র নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

আরও পড়ুন: ‘আমাদের তো সব শেষ হইয়্যা গেল’

বঙ্গবাজারের অস্থায়ী-অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দ্য রিপোর্ট.লাইভের এই প্রতিবেদকের আলাপে উঠে এসেছে, গতকাল সোমবার সকাল নয়টার দিকে দোকানপাট সব স্বাভাবিক অবস্থায়ই ছিল। তবে আজকালের মধ্যে দোকান ভাঙার গুঞ্জন শুনেছেন তিনি।

আগে থেকে না জানিয়ে অস্থায়ী-অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ করায় কর্মসংস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বঙ্গবাজারের বাজারের। ছবি: দ্য রিপোর্ট.লাইভ

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ওই ব্যবসায়ী জানান, কিছুদিন পর পরই দোকান ভাঙার এমন গুঞ্জন উঠলেও সেদিন সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করেই এক্সক্যাভেটর এনে  দোকান ভাঙা শুরু হয়।

অনুদানের টাকা না দিয়েই বঙ্গবাজারের অস্থায়ী-অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সেই দাবিতে অনড়। ছবি: দ্য রিপোর্ট.লাইভ

নাম না জানিয়ে আরেক ব্যবসায়ী যোগ করেন, ‘ঈদের ছুটিতে অনেকেই এখনও গ্রামে। বঙ্গবাজার ভাঙার খবর শুনে তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হন। সেখানে গিয়ে দেখি, যে যার মতো মালপত্র সরিয়ে নিচ্ছে।’

বঙ্গবাজারে অস্থায়ী মার্কেট উচ্ছেদ শুরু হয় গতকাল সোমবার। এই ‘সিটি করপোরেশনের’ নির্দেশে ব্যবসায়ী মালপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। ছবি: দ্য রিপোর্ট.লাইভ

দ্য রিপোর্ট.লাইভের প্রতিবেদককে ওই ব্যবসায়ী জানান, চাঁদরাতে বঙ্গবাজারে বেড়িগেট দেওয়ার কথা ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। ঈদের পর ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ দিয়ে একটি সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছিল। তাই বলে হঠাৎ করেই বাজারটি খাঙার বিষয়টি ব্যবসায়ীদের আগে থেকে বলা হয়নি। অনেক ব্যবসায়ী তাদের মালপত্র সরানোর সময় পাননি। মালপত্র কবে নাগাদ সরিয়ে নিতে হবে তা স্পষ্ট করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী।

বুল্ডোজারে ভেঙে যাচ্ছে বঙ্গবাজারের ক্ষতির সম্মুখীন ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যত। ছবি: দ্য রিপোর্ট.লাইভ

বঙ্গবাজারের অস্থায়ী মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মো. আনু মিয়া বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ চাইলে যখন তখন আমাদের উঠিয়ে দিতে পারে। কিন্তু গতকাল (সোমবার) তো আমরা ছিলামই না। বাজার ভাঙ্গার বিষয়ে অনেকে জানতো, আবার অনেকে জানতই না। আমরা জানতাম চাঁন (চাঁদ) রাতে দোকান ছেড়ে দিতে হবে। আরেকটু সময় দিলে সুন্দরভাবে মালপত্র সরায় নেওয়া যেতো।’

অদৃশ্য কারও নির্দেশে ব্যবসায়ীদের মালপত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে? ছবি: দ্য রিপোর্ট.লাইভ

বঙ্গবাজার ভাঙার পর এখন তারা কি করবেন এমন প্রশ্ন করা হলে জবাবে ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ শেখ বলেন, ‘৯৬ সাল থেকে প্রায় ২৮ বছর ধরে বঙ্গবাজারে ভাড়াটে হিসেবে ব্যবসা করছি। তবে বাজার ভাঙার পর অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই কারণেই কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। গত বছর বঙ্গবাজারে আগুণ লাগার পর ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা এখনও সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা এক বছর আরও সময় পেলে ভালো হতো।’

বঙ্গবাজারে অস্থায়ী-অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ করে নির্মাণ করা হবে বহুতল ভবন। ছবি: দ্য রিপোর্ট.লাইভ

ব্যবসায়ী সুমন আখতার যোগ করেন, ‘নতুন করে দোকান দেওয়ার টাকা আমাদের কাছে নেই। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও ৪ বছর সময় লাগতে পারে। এখন ভিন্ন কোনো পেশা কিংবা চাকরি করতে হবে।’

সোমবার বঙ্গবাজারে অস্থায়ী-অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদ শুরু হয়। ব্যবসায়ীদের আগে থেকে না জানানোর ফলে তাদের অসহায়ত্ব অবর্ণনীয়। ছবি: দ্য রিপোর্ট.লাইভ

আরেক ব্যবসায়ী সাত-উল-আলম বলেন, ‘এক হিসাবে জোর করেই আমাদের উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্থায়ী ব্যবসায়ীরা তো দোকান পাবে। কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ীরা তো দোকান পাবে না। প্রকৃতপক্ষে সাধারণ ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চাঁদরাতে আমাদের কিছু অনুদানের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা এখনও পাইনি। আমরা স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী। সরকার থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করায় কর্মসংস্থান নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি।’

Link copied!