ঈদের পরেই বঙ্গবাজার মার্কেটের বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পাঁচদিনের ব্যাবধানে গতকাল সোমবার (১৫ এপ্রিল) পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের দোকানপাট ভেঙে ফেলায় বিপাকে পড়েছেন অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা। চাঁদরাতের আগেই অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের অনুদানের টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেই টাকা এখনও পাননি বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। উপরন্তু ঈদের পর হঠাৎ করেই বঙ্গবাজার ভেঙে ফেলায় মালপত্র নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: ‘আমাদের তো সব শেষ হইয়্যা গেল’
বঙ্গবাজারের অস্থায়ী-অবৈধ মার্কেট উচ্ছেদের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দ্য রিপোর্ট.লাইভের এই প্রতিবেদকের আলাপে উঠে এসেছে, গতকাল সোমবার সকাল নয়টার দিকে দোকানপাট সব স্বাভাবিক অবস্থায়ই ছিল। তবে আজকালের মধ্যে দোকান ভাঙার গুঞ্জন শুনেছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ওই ব্যবসায়ী জানান, কিছুদিন পর পরই দোকান ভাঙার এমন গুঞ্জন উঠলেও সেদিন সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করেই এক্সক্যাভেটর এনে দোকান ভাঙা শুরু হয়।
নাম না জানিয়ে আরেক ব্যবসায়ী যোগ করেন, ‘ঈদের ছুটিতে অনেকেই এখনও গ্রামে। বঙ্গবাজার ভাঙার খবর শুনে তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হন। সেখানে গিয়ে দেখি, যে যার মতো মালপত্র সরিয়ে নিচ্ছে।’
দ্য রিপোর্ট.লাইভের প্রতিবেদককে ওই ব্যবসায়ী জানান, চাঁদরাতে বঙ্গবাজারে বেড়িগেট দেওয়ার কথা ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। ঈদের পর ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ দিয়ে একটি সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছিল। তাই বলে হঠাৎ করেই বাজারটি খাঙার বিষয়টি ব্যবসায়ীদের আগে থেকে বলা হয়নি। অনেক ব্যবসায়ী তাদের মালপত্র সরানোর সময় পাননি। মালপত্র কবে নাগাদ সরিয়ে নিতে হবে তা স্পষ্ট করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী।
বঙ্গবাজারের অস্থায়ী মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মো. আনু মিয়া বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ চাইলে যখন তখন আমাদের উঠিয়ে দিতে পারে। কিন্তু গতকাল (সোমবার) তো আমরা ছিলামই না। বাজার ভাঙ্গার বিষয়ে অনেকে জানতো, আবার অনেকে জানতই না। আমরা জানতাম চাঁন (চাঁদ) রাতে দোকান ছেড়ে দিতে হবে। আরেকটু সময় দিলে সুন্দরভাবে মালপত্র সরায় নেওয়া যেতো।’
বঙ্গবাজার ভাঙার পর এখন তারা কি করবেন এমন প্রশ্ন করা হলে জবাবে ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ শেখ বলেন, ‘৯৬ সাল থেকে প্রায় ২৮ বছর ধরে বঙ্গবাজারে ভাড়াটে হিসেবে ব্যবসা করছি। তবে বাজার ভাঙার পর অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এই কারণেই কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। গত বছর বঙ্গবাজারে আগুণ লাগার পর ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা এখনও সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা এক বছর আরও সময় পেলে ভালো হতো।’
ব্যবসায়ী সুমন আখতার যোগ করেন, ‘নতুন করে দোকান দেওয়ার টাকা আমাদের কাছে নেই। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও ৪ বছর সময় লাগতে পারে। এখন ভিন্ন কোনো পেশা কিংবা চাকরি করতে হবে।’
আরেক ব্যবসায়ী সাত-উল-আলম বলেন, ‘এক হিসাবে জোর করেই আমাদের উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্থায়ী ব্যবসায়ীরা তো দোকান পাবে। কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ীরা তো দোকান পাবে না। প্রকৃতপক্ষে সাধারণ ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চাঁদরাতে আমাদের কিছু অনুদানের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা এখনও পাইনি। আমরা স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী। সরকার থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করায় কর্মসংস্থান নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি।’