শীতের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে, আসছে বসন্তের সুন্দর দিন। প্রকৃতির হাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে এ সময় শরীরে ও দেখা যায় নানা পরিবর্তন। সৌন্দর্য ধরে রাখার পাশাপাশি সুস্থ থাকার জন্য ব্যবহার করতে পারেন অ্যালোভেরা। যা বাংলায় ঘৃতকুমারী নামে পরিচিত।
ত্বক ভালো রাখতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে এর নির্যাস শরবত হিসেবে খাওয়া ও ত্বকে ব্যবহার দুটোই বেশ উপকারী।
চলুন জেনে নেয়া যাক, অ্যালোভেরার উপকারিতা এবং কীভাবে খাবেন-
ত্বকের সৌন্দর্যে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ত্বকের জন্য খুব বেশ একটি পানীয় অ্যালোভেরা জুস। এতে রয়েছে ভিটামিন ইএবং এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ত্বকে উজ্জ্বল করে। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে যার ফলে ত্বকে সহজে বলি রেখা পড়ে না।
ঘৃতকুমারীতে থাকা অ্যান্টি-ফ্ল্যামেটারি ও অ্যান্টি- ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ নিরাময় করে। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ দূর হয়। অ্যালার্জি বা ত্বকের অন্যান্য সমস্যা সমাধানে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকর। রোদে পোড়া ত্বকে অ্যালোভেরা, শসার রস আর দই মিশিয়ে একত্রে লাগালে ত্বকের উপকার হয়।
চুলের যত্নে সহায়ক
অ্যালোভেরায় থাকা অ্যালোমিন চুলকে লম্বা হতে সাহায্য করে। নিয়মিত অ্যালোভেরার রস খেলে বা চুলে ব্যবহার করলে খুশকি ও চুল পড়া কমে যায়। চুল পরিষ্কার করতে, চুলে পুষ্টি জোগাতে এবং চুল ঝলমলে উজ্জ্বল রাখতে অ্যালোভেরা রসের জুড়ি নেই। এটি ব্যবহারে চুল হয়ে উঠে ঝরঝরে ও মসৃণ।
পেটের সমস্যা সমাধানে অ্যালোভেরা জুস
পেটের সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা কম নয়। পেটে গ্যাস, অম্বল, পেট জ্বালা ইত্যাদি নানা সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষের অভাব নেই। এক্ষেত্রে অ্যালোভেরা খেলে মিলতে পারে সমাধান। এতে রয়েছে বেশ কিছুটা ফাইবার। এতে থাকা রাসায়নিক অনেক ক্ষেত্রেই পেটের উৎসেচক তৈরিতে সাহায্য করে। তাই পেট ভালো রাখতে চাইলে অ্যালোভেরা খান।
এছাড়া অ্যালোভেরার পাতার নিচের দিকে চটচটে হলুদ রঙের আঠালো একটি পদার্থ রয়েছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ হিসেবে দারুণ কার্যকর।
শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক
অ্যালোভেরা জুস এমন একটি পানীয় যা মানব শরীরকে হাইড্রেট রাখতে পারে। এই পানীয়ে রয়েছে অনেকটা পানি এছাড়াও খনিজ ও ভিটামিনে ভরপুর থাকায় ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য রাখতে পারে এটি। অ্যালোভেরা জুস হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তে অক্সিজেন স্বাভাবিক রাখে। শুধু তাই নয় রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়
ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় অ্যালোভেরা জুস। এই জুস নিয়মিত সেবনে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে, ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
ওজন কমাতে অ্যালোভেরা
মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যক আটটি অ্যামোইনো অ্যাসিড, বি-সিসটারোলসহ ১২টি উপাদান, যা অ্যালোভেরাতে বিদ্যমান রয়েছে। এসব উপাদান শরীরে কোনো প্রদাহ তৈরি হওয়া ঠেকায়। শরীরকে দূষণমুক্ত করার মধ্য দিয়ে ঘৃতকুমারী আপনার স্বাস্থ্যের যে প্রাথমিক উন্নতি ঘটায় তার অবধারিত ফল হলো ওজন ঠিকঠাক থাকা।
এমনিতে ওজন কমানো নিয়ে অনেক সমস্যায় থাকলেও নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস খেলে আপনার বাড়তি ওজনের সমস্যা অনেক কমে আসবে। শরীর ঠান্ডা রাখবে। এতে থাকা নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ওজন কমিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতেও সাহায্য করে।
যেভাবে খাবেন ঘৃতকুমারী
শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে এবং রোগবালাই দূর করতে অতুলনীয় ঘৃতকুমারী। তবে, এটি ব্যবহারে সতর্কতার প্রয়োজন আছে। দিনে ২ বার ও ১০ মিলিলিটারের বেশি করা যাবে না। খেতে হবে শুধু পাতার ভেতরের জেল অংশের রসটুকু। চাইলে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। তবে এটি শিশুদের খাওয়ানো যাবে না।
কিশোর বয়স থেকে স্বাভাবিক সুস্থ, যে কেউ খেতে পারবেন। সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্যে খেতে চাইলে, কী পরিমাণ খাবেন, কখন খাবেন, কতদিন খাবেন সেটি একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। রাস্তার পাশের ভ্যানে বিক্রি হওয়া অস্বাস্থ্যকর ঘৃতকুমারীর শরবত খাবেন না।