আপনি কেমন জীবনসঙ্গী চান? এর উত্তর আসলে সহজ নয়। কেননা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটা মানুষই আমূল বদলে যায়। তার চাওয়া, পাওয়া সুখে থাকার মাপকাঠিও বদলে যায়। আপনি যেমন আপনার বন্ধুর মতো নন, আপনার জীবনসঙ্গীও নিশ্চয়ই আপনার বন্ধুর স্ত্রী বা স্বামীর মতো হবেন না। তাই অন্যের স্ত্রী বা স্বামীর কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্য বাড়িতে ফিরে আপনার সঙ্গীর ভেতর খুঁজতে যাবেন না।
২০২২ সালের আগস্টে ভারতের কেরালা রাজ্যের আদালত এক ঐতিহাসিক রায় দেন। সেখানে বলা হয়, স্ত্রীকে অন্য নারীর সঙ্গে তুলনা করা মানসিক নির্যাতনের শামিল। উল্টোটাও একইভাবে সত্য। জেনে নেওয়া যাক, যে ১০ কারণে আপনি জীবনসঙ্গীকে এক্স, ওয়াই বা অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করবেন না:
১. অন্যের সঙ্গে সঙ্গীর তুলনা করে তাঁকে ছোট করা, হীনম্মন্যতায় ভোগানো রীতিমতো অন্যায়। অন্যের ভালো কিছুকে প্রশংসা করুন। বাড়িতে ফিরে নিজের দাম্পত্য সম্পর্কে মন দিন।
২. একবার ভাবুন তো, আপনার সঙ্গী যদি অন্য কারও সঙ্গে তুলনা টেনে কেবল আপনাকে ছোট করে দেখাতেন, আপনার কেমন লাগত? আপনি যখন অন্যের সঙ্গে অপর পক্ষের তুলনা করেন, সেই মানুষটার ঠিক তেমনই লাগে।
৩. দ্য গার্ডিয়ানের ‘দ্য থ্রি থিংস ইউ নিড টু মেক আ রিলেশনশিপ ওয়ার্ক’ শিরোনামে লেখায় জানানো হয়, গবেষণা বলে, সুখী হওয়ার চেয়ে অসুখী হওয়া অন্তত চার গুণ সহজ। আর সুখী হওয়ার জন্য একটা সন্তুষ্ট হৃদয়ের কোনো বিকল্প নেই। তাই নিজের সঙ্গীকে তুলনার পাল্লায় ফেলার অপরাধের ফলস্বরূপ আপনিও ক্রমাগত অসন্তুষ্টিতে ভুগবেন। আর সুখ থেকে অনেক দূরে চলে যাবেন।
৪. আপনার তুলনার বেড়াজাল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সঙ্গী আপনাকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন। এতে আপনি আরও একা আর অসুখী হয়ে উঠবেন।
৫. যখন আপনি সঙ্গীর প্রশংসা করতে ভুলে যান, আপনার সম্পর্ক ক্রমেই রং হারাতে হারাতে বিবর্ণ আর একঘেয়ে হয়ে যায়।
দেখা যায় ৫ বছরের প্রেমের বিয়েও ৫ মাসেই ভেঙে যায় এর কারন ভালোবেসে বিয়ে করার পরও সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে না অনেকেই। সুখে-দুঃখে শক্তভাবে একজন আরেকজনের পাশে থাকলে দাম্পত্যে সুখী হওয়া যায়।
৬. তুলনা করার ফলে কেউ-ই লাভবান হয় না, মাঝখান থেকে আপনাদের সম্পর্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ‘সঠিক সঙ্গী’ (পারফেক্ট পার্টনার) বলে কিছু নেই। শতভাগ সুখি দাম্পত্য সম্পর্ক বলেও কিছু হয় না।
৭. ভালো-মন্দ মিলেই মানুষ। সঙ্গীর ভালো দিকগুলো বড় করে দেখুন। সেগুলোর প্রশংসা করুন। আরও ভালো হতে অনুপ্রাণিত করুন। কোনো কিছু আপনার ভালো না লাগলে সেটা তৃতীয় পক্ষের সামনে না বলে নিজেরা আলোচনা করুন।
৮. কীভাবে আমরা সঙ্গীকে সব সময় মনের মতো চাইব, যখন আমরা নিজেরাই নিজেদের মনের মতো নই?
৯. তুলনা একটা দাম্পত্য সম্পর্ককে অযথাই চাপে রাখে। সময়ের সঙ্গে সেই চাপ বাড়তে থাকে। কেননা, তুলনা করার অভ্যাস সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে। আর আপনি তুলনা করছেন মানে আপনার সঙ্গীকেও অন্য কারও সঙ্গে আপনার তুলনা করতে উৎসাহ দিচ্ছেন।
১০. তুলনা করার বাজে স্বভাব আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের বারোটা বাজাবে। সম্পর্ক থেকে সম্মান বিষয়টা ধীরে ধীরে ‘নাই’ হয়ে যাবে। তখন কেবল মায়া আর অভ্যস্ততা দিয়ে জুড়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
আমরা যদি একে অপরকে অন্যের সাথে তুলনা করার আগে নিজের দিকটা বিবেচনা করে দেখি যে নিজের মধ্যে কতটা পরিপূর্ণতা রয়েছে তাহলে আর তুলনা-মূলক প্রশ্নটাই থাকবে না।