প্রেমিক অথবা প্রেমিকার হাত ধরে শহরের নানা গলি কিংবা গ্রামের মেঠো পথ হয়তো অনেকেই পাড়ি দিয়েছেন বা দিচ্ছেন। যারা সবেমাত্র এপথ মাড়িয়েছেন তারা কি নিশ্চিত আপনাদের এই সম্পর্কটা আদৌ প্রেমের কিনা? যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই সম্পর্ক কি অন্য কোনও সম্পর্কে সংজ্ঞার সাথে মিলে যাচ্ছে? নতুন যুগের নতুন শব্দ, সিচুয়েশনশিপ। অপরিচিত লাগছে? চলুন বিস্তারিত জানা যাক।
সিচুয়েশনশিপ কী
এই ধরনের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দায়হীনতা। প্রচলিত জীবনযাত্রায় আমরা যেকোনো রোমান্টিক সম্পর্কে পরিণতি কিংবা পরিণতির দিকে যাওয়ার চেষ্টা, একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু এই সম্পর্কে পরিণতির দিকে যাওয়ার চেষ্টা বা কারো প্রতি কারো দায়বদ্ধ থাকার কিছু নেই।
অক্সফোর্ড ডিকশনারির ভাষ্যমতে, সিচুয়েশনশিপ বলতে এমন রোমান্টিক সম্পর্ক বোঝায়, যার আদতে কোনো প্রতিষ্ঠিত রূপ নেই। কেউ কেউ মজা করে একে `বন্ধুর চেয়ে কিছু বেশি, প্রেমিক-প্রেমিকার চেয়ে কিছু কম` বলেও সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এ ধরনের সম্পর্ককে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে `অসংজ্ঞায়িত`ই রেখে দেওয়া হয়।
কীভাবে বুঝবেন সিচুয়েশনশিপে আছেন
প্রেম নয় কিন্তু বন্ধুত্ব, বন্ধুর চেয়ে বেশি কিন্তু প্রেম নয়। নতুন প্রজন্মের কাছে এমন সম্পর্ক সিচুয়েশনশীপ নামে পরিচিত।
ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন একটা চিন্তা নেই, আজকের মুহূর্ত উপভোগই বড় কথা মনে হচ্ছে এবং কেউ কাউকে আগামীতে একসঙ্গে থাকবেন কি না সেই কথা দিচ্ছেন না। `যা হবে, দেখা যাবে` ভেবে দিব্যি দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন। ঠিক প্রেমও করছেন না, আবার বিষয়টা বন্ধুত্বের গণ্ডিতেও আটকে নেই। দুজনের কারোরই নেই সম্পর্কটাকে প্রতিষ্ঠিত করার বা কোনো নাম দেওয়ার তাগাদা। তাহলে ধরে নিতে হবে, আপনি সিচুয়েশনশিপে আছেন।
ভালো-মন্দ দিকসমূহ
সময়ের বিবর্তনে সম্পর্কের ধরনও বদলেছে কোনো না কোনো প্রয়োজনীয়তা থেকে। জীবনযাত্রার গতি-প্রকৃতির সঙ্গে চাহিদার রূপ পাল্টায়। আমাদের আগের কিংবা তারও আগের প্রজন্মের চাহিদা থেকে প্রায় ক্ষেত্রেই আমাদের চাহিদা ভিন্ন।
ঠিক তেমনি, কোনো কোনো মানুষ একসময় হয়তো একটা দায়হীন, ঝামেলাবিহীন, ভারমুক্ত রোমান্টিক সম্পর্কের চাহিদা অনুভব করেছে এবং এরপরই সিচুয়েশনশিপের মতো ধারণার জন্ম হয়েছে। অন্য যেকোনো বিষয়ের মতোই সিচুয়েশনশিপের বেশ কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। তা ব্যক্তিভেদে, ব্যক্তির চাহিদা ও জীবনে সামলে নেওয়ার ভঙ্গিমা অনুযায়ী ভিন্ন।
লেখক ও মনস্তাত্ত্বিক সুজান আলবার্স মনে করেন, যদি এক পক্ষের প্রত্যাশা অপর পক্ষ থেকে আলাদা হয় এবং তা এক বিন্দুতে না মেলে তবে এসব ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। এখানে তিনি সম্পর্কে `পাওয়ার ডাইনামিকে`র কথা উল্লেখ করেন। যদি একজন নিয়ন্ত্রক আর অপরজন নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে, তাহলে সিচুয়েশনশিপ তিক্ততার দিকে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তাই সিচুয়েনশিপের মতো অসংজ্ঞায়িত ব্যবস্থাই হোক বা প্রেম-বিয়ের মতো অপেক্ষাকৃত প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক, সম্পর্কের সীমারেখা সম্পর্কে উভয় পক্ষের সমান সচেতন হওয়াটা খুব জরুরি। একে অন্যের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পারবে কি আদৌ পারবে না, সে নিয়ে স্পষ্ট যোগাযোগ থাকা উচিত। নয়তো যেকোনো সময় দোষারোপের বিষয় চলে আসে এবং বহু মধুর থেকে মধুরতম সম্পর্কেও জন্ম নেয় এক অনাকাঙ্ক্ষিত বিষাক্ত আবহ।
সবকিছুরই ভালোখারাপ দুটি দিকই থাকে। এবার আসি সিচুয়েশনশীপের ভালো দিক বিষয়ে। এই কথা মানতেই হবে যে সিচুয়েশনশীপের কিছু ভালো দিকও আছে।
এতে মানুষ নিজের পছন্দ সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। সিচুয়েশনশীপ কারো কোনো ক্ষতি না করে ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার ভালো একটি উদাহরণ । ব্যক্তি সবসময় সার্বিকভাবে কোনো রোমান্টিক সম্পর্কে নিজের পুরোটা দেওয়ার মতো অবস্থায় থাকে না, কিন্তু তারপরও তার মধ্যে থাকা একাকিত্ব বা চাহিদার বশেই তার সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। সে সঙ্গীর প্রয়োজন যে একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যেই থাকতে হবে, এমনটা নয়। সেক্ষেত্রে সমমনা, একই গতি-প্রকৃতির কারো সঙ্গে যদি মিলে যায়, তাহলে সিচুয়েনশিপের মতো অস্থায়ী-অনিশ্চিত পদ্ধতিও বেশ কার্যকর মনে হতে পারে। তবে এখানে জড়িয়ে না পড়তে চাওয়া থেকে শুরু করে জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটাও অদ্ভুত কিছু নয়। সেক্ষেত্রে `সিচুয়েশন` সেই `শিপ`কে কদ্দূর নিয়ে যায়, নাকি মাঝ-দরিয়ায় রেখে ডুব দেয়, তা দেখার বিষয়।