ছোটবেলায় ভূতের গল্প বা গোস্ট স্টোরি তো আমরা সবাই শুনেছি এবং এ নিয়ে বেশ ভয়ও পেয়েছি। এই নিয়ে রাতের বেলা একটা আতঙ্ক ঠিকই কাজ করতো কিন্তু! আজকাল সম্পর্কে বেশ শোনা যায় একটি শব্দ যার নাম “গোস্টিং” । কিন্তু কী এই গোস্টিং? কেন হয় গোস্টিং?
অনেকেই এই ব্যাপারে জানেন আবার অনেকেই জানেন না। অনেকের সাথেই গোস্টিং হয় কিন্তু অনেকে আবার সেটা বুঝে উঠতে পারেন না যে তাদের সাথে কী হচ্ছে এবং কেন হচ্ছে! তবে এটা কোনো ভূতের বিষয় নয়, বরং নিজেই এক ধরনের ভূত হয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার।
সম্পর্কে বিশেষ করে রোমান্টিক সম্পর্কে এক পক্ষ থেকে হুট করে কোনো কারণ না দেখিয়েই যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া বা একেবারেই সাড়া না দেয়ার বিষয়টিকেই শহুরে আলাপনে নাম দেওয়া হয়েছে গোস্টিং। ঠিক ভূতের মতোই উধাও হয়ে যাওয়ার কিংবা হুট করে `ভূত` বা অতীত হয়ে যাওয়ার জন্যই এই নামকরণ।
সম্পর্ক যেমনই হোক বন্ধুত্ব বা প্রেমের বা স্বল্পপরিচিতির যেটাই হোক, এক না এক সময় এই পক্ষের মনে হতে পারে যে এই সম্পর্ক একটা সময় বোঝার মতো মনে হতে পারে তখন সেই পক্ষ অপরপক্ষকে কিছু না জানিয়েই অন্যপক্ষকে করতে পারে “গোস্ট” । এমন মানুষদের কাছে সম্পর্কের ইতি টানতে বা এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চ্যালেঞ্জিং বা বিরক্তিকর মনে হয় তাই তারা ভেছে নেয় গোস্টিং এর মতো পথ।
যিনি কিছু না বলে অন্য পক্ষকে গোস্ট করে দেন তার জন্য এই উপায় সহজ মনে হলেও অন্য পক্ষ কিন্তু এটা সহজভাবে মেনে নিতে পারে না। তারা এ নিয়ে ভুগতে পারে নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায়! তারা নিজের মনে মনেই ভাবতে থাকে যে “আমি কি কোনো দোষ করেছি?” “আমার মধ্যে কি কোনো কমতি ছিল?” “আমি কি একজন ভালো প্রেমিক/প্রেমিকা বা বন্ধু না?” “বলে গেলেও তো পারতো”, “আমার সাথে কেন এমন হলো?” এসব প্রশ্নে নিজেকে ঘিরে ফেলেন।
এই গোস্টিং বিষয়টা কেউ কিন্তু সামনাসামনি খুব একটা করতে পারে না। এই জিনিসটা সবচেয়ে বেশি হয় ডিজিটালি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফোন নম্বর, সামাজিকমাধ্যম ইত্যাদি পরিসরে ব্লক করে দেওয়া বা শুধু মেসেজ বা কলের উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দিলেই কাউকে গোস্ট করাটা সহজ হয়ে যায়। তখন ওপর পাশের মানুষটা বুঝতে পারে যে অন্যপক্ষ তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করতে চাচ্ছে না সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হোক বা সামনাসামনি হোক।
যেকোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দুইপক্ষের এক থাকা জরুরি। যখন এক পক্ষ সরে যায় তখন আর ওপর পক্ষকে সেই সম্পর্কের জন্য নিজেকে কষ্ট দেওয়া বা প্রশ্নবিদ্ধ করে নাজেহাল করা উচিত নয়। এতে বরং নিজেরই ক্ষতি! তাই যদি গোস্টিং-এর স্বীকার হন তাহলে সেই পথ এবং সেই মানুষ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ সব সম্পর্ক ঠিক হয় না, হতেও নেই। ঠিক রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সেই কবিতার মতোই- ‘আঁকড়ে থেকো না কিছু। যে যাবার তাকে চলে যেতে দাও, যে ফেরার সে তো ফিরবেই।’