রাখাইন থেকে দেশের কূটনীতিকদের সরিয়ে নেয়া হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০২:২০ পিএম

রাখাইন থেকে দেশের কূটনীতিকদের সরিয়ে নেয়া হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

রাখাইনের রাজধানী সিত্তে থেকে বাংলাদেশ কনসুলেটের কূটনীতিকদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সোমবার বেলা দেড়টার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর উত্তর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমারে যা হচ্ছে তা অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে সীমান্তে যারা পাহারা দিচ্ছে সেটাও অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব পর্যন্ত করেছি। তাই আমাদের পক্ষ থেকে যা করার সেটার সর্বোচ্চটা করছি।

মিয়ানমার থেকে তাদের সেনাদের ফিরিয়ে নিতে জাহাজ আসার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাহাজটি কখন ভিড়বে সেটি টেকনিক্যাল পার্ট। আমরা সম্মত তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। এটা খুব সহসা হবে।

মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও তাদের সাথে কিছু সেনা যারা এসেছে, তারা রোহিঙ্গা গণহত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট কিনা সেটি তদন্ত করার দাবি উঠেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আপাতত তাদের ফেরত পাঠানো নিয়েই কাজ করছি। কারণ সেটিই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার এবং মিয়ানমারও তাদের নিয়ে যেতে চায়। আমরা সেটি নিয়েই কাজ করছি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মি দখল করেছে, বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তে তারা টহল দিচ্ছে সেটি দেশের নিরাপত্তা নিয়ে সংকট তৈরি করবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী হাছান বলেন, মিয়ানমারে যেটি ঘটছে সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাদের নিরাপত্তা চৌকি কে পাহারা দিচ্ছে সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাদের অভ্যন্তরীণ গন্ডগোলের কারণে এখানে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হোক সেটি আমরা কখনো চাই না। আমাদের এখানে তাদের শেল এসেছে পড়েছে, দুইজন নিহত হয়েছে। সেটি নিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে আমরা কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি।

বিএনপি বলেছে মিয়ানমার ইস্যুতে সরকার তথ্য গোপন করছে -এ নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি তো বক্তব্য দিয়ে তাদের দলের অস্তিত্ব জানান দিতে চায়। এখানে মিয়ানমারের যতোজন সদস্য আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে সে বিষয়ে আমরা সময়ে সময়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করেছি। এখানে লুকোচুরি করার প্রশ্নই আসে না। তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি খুব সহসা তাদের ফেরত পাঠাতে পারব।

তিনি বলেন, বিএনপি এসব বক্তব্য ও নানা কর্মসূচি দিয়ে তাদের হতাশা কাটানোর চেষ্টা করছে। আমরা চাই তারা গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্যে থাকবে। সরকারের প্রতিবাদ তারা করতেই পারে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস আর করতে দেয়া হবে না।

নাফ নদীর তীরে অনেক রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছে, তাদের জন্য বর্ডার খুলে দেওয় হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের দেশে রোহিঙ্গা আছে ১.২ মিলিয়ন। এখন রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। যেমন পরিবেশগত সমস্যা, নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, মাদকজনিত সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পক্ষে কি আরো রোহিঙ্গা আশ্রয় দেওয়া সম্ভব? আর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিয়েই সংঘাত চলছে তা নয়। তাদের মধ্যে নানা জাতিগোষ্ঠী আছে। তাদের মধ্যে নানা সমস্যা চলছে। সেই সংঘাতের উত্তাপের কারণে আমাদের দেশে আমরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়ব সেটি কি সঙ্গত?

মিয়ানমার ইস্যুতে ভারত সফরে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে এখন যে সংঘাত চলছে সেই সংঘাতের কারণে আমাদের অঞ্চলে যে সংকট তৈরি হয়েছে, নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে যেসব রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছে তাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে সেখানে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে ভারতের সহায়তা কামনা করেছি।

মিয়ানমার ইস্যুতে ভারত-বাংলাদেশ কিভাবে একসাথে কাজ করবে -এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী হাছান বলেন, আমরা তাদের সাথে বর্ডার শেয়ার করি। সুতরাং মিয়ানমারে যদি কোন পরিস্থিতির উদ্বেগ ঘটে তাহলে সেটি আমাদের দেশকে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা উদ্বিগ্ন করে তাদেরকেও উদ্বিগ্ন করে। সুতরাং দুই দেশেরই যেহেতু উদ্বেগ প্রতিবেশিকে নিয়ে তাই আমাদের একসাথে কাজ করার অনেক বিষয় তো রয়েছে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাদের খুব শিগগিরই ফেরত পাঠানো হবে।’

তবে দিনক্ষণ এখনও ঠিক করা হয়নি বলে জানান তিনি।

অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশে অবস্থানকারী দুই জন মারা গেছে (১ জন রোহিঙ্গা), যা একেবারে অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

Link copied!