আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে গণতন্ত্র সুরক্ষার নজির নেই: রিজভী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১, ২০২২, ০৬:০৫ এএম

আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে গণতন্ত্র সুরক্ষার নজির নেই: রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, টলটলায়মান গদি যে কোনো সময় তাসের ঘরের মতো পড়ে যেতে পারে—এই ভয়ে আওয়ামী সরকার এখন বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দলটি গণতন্ত্রের কথা বলে, তবে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে গণতন্ত্র সুরক্ষার নজির নেই।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে একান্ত এক সাক্ষাৎকারে সরকারের চলমান নানা ইস্যু ও বিএনপির নানা পদক্ষেপ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন বিএনপির এই নেতা।

সামনের জাতিয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির জাতীয় ঐক্য গঠন নিয়ে কথা হচ্ছে। কোন কোন দলের সাথে আলোচনায় যাবে বিএনপি, এমন প্রশ্নে রিজভী বলেন, মানুষের বাক স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকারসহ গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্তগুলোকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের চর্চা এবং রাষ্ট্রীয় এবং সমাজে গণতন্ত্রের বিকাশ যারা চায় তাদের সাথে আলোচনায় যাবে দল। শুধু রাজনৈতিক দল না, সব রকম শ্রেণী পেশার মানুষের সাথেই আলোচনায় যাবে বিএনপি। কারণ, এ মুহুর্তে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চর্চা ফিরিয়ে আনতে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ দরকার।

বিএনপির কর্মসূচির সাথে জামায়াত সব সময়ই মাঠে থেকেছে। তাদের সাথে এখনকার সম্পর্ক কেমন— এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, জামায়াত একটা আদর্শিক রাজনৈতিক দল, তাদের আলাদা কর্মসূচি আছে। তেমন বিএনপিও আলাদা রাজনৈতিক দল। এই দলের নিজেদের আলাদা আদর্শ ও কর্মসূচি রয়েছে। সেটার উপর ভিত্তি করেই দুই দলের নেতাকর্মীরা আবর্তিত।

জাতীয় সরকার নিয়ে প্রায়শ কথা উঠছে নানা মহলে। বিশেষ করে ‘জাতির সংকট নিরসনে জাতীয় সরকার ‘শিরোনামে একটি লিখিত প্রস্তাব বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিএনপির পক্ষ থেকে এমন কোনো চিন্তাভাবনা আছে কিনা, বা থাকলে প্রধান হিসেবে দলটি কাকে দেখতে চায়— এমন প্রশ্নে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমরা জাতীয় সরকারের কনসেপ্টেই বিশ্বাস করি না। তো জাতীয় সরকারের প্রশ্নই আসছে কেনো? বিএনপি যদি অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচিত হয় তাহলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচিত হবেন।”

জাতীয় সরকারের ধারণা সম্পর্কে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা প্রথমেই যে কথাটা বলছি সেটা হলো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তারপর একটা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার হবে। সেই সরকার জনগণের অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন করবে। আর সেই নির্বাচনে ভোট কারচুপি হবে না বলে সকল রাজনৈতিক দল আস্থাশীল হবে। জনগণ যে রায় দেবে সেটার প্রতিফলন হবে। এমন নির্বাচনের মধ্যে যারাই  ক্ষমতায় আসবে তাদেরকেই বিএনপি সমর্থন করবে। এতে জাতীয় সরকার বা কি সরকার এমন প্রশ্ন আসবে না। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে ও ভোট স্বচ্ছ হতে হবে।

কিন্তু শেখ হাসিনার মাধ্যমে  স্বচ্ছ নির্বাচন হতে পারে— এটা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ এমন প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি। জাতীয় সরকারের কথা যারা বলছেন তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা তাদের নিজের কথা হতে পারে। কিন্তু যে সব রাজনৈতিক দল এখন বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন- সংগ্রাম করছে তারা এই সকল জাতীয় সরকার সম্পর্কে অবহিত নয়।

দলের অবস্থান যেটা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবার পরে যারা আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন, যে সমস্ত রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই করেছেন, তাদেরকে নিয়ে জাতীয় সরকার হতে পারে। তবে সেটা নির্বাচনের পর, পূর্বে নয়।

সামনের সংসদ নির্বাচন নিয়েও রিজভী দলের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের নাগরিক সমাজের অনেকেই মনে করতেন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে রাজনৈতিক কিংবা নির্বাচনী পরিস্থিতি ভিন্ন মাত্রা পেতে পারে। কিন্তু আমরা সেটা বিশ্বাস করি না। কারণ একটা রাষ্ট্রের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে রাষ্ট্রের যারা পরিচালক আছে সরকার তাঁর স্বরুপ বোঝা যায়। এই সরকার কখনো অবাধ, সুষ্ঠ নির্বাচন করবে না। এ কারণেই তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত ছিল, সেখান থেকে তারা বের করে দিয়েছে। কারণ তারা ক্ষমতায় থাকতে চান আজীবন।

রিজভী বলেন, প্রতিটি নির্বাচনে সরকারের ভাবমূর্তি প্রতিফলিত হয়েছে। ২০১৪ এর নির্বাচনে ভোট দিতে কেউ যায়নি। সারাদেশের মানুষ তাদের বয়কট করছে। ১৫৪ টা সিটে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিলো না। সেক্ষেত্রে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতলেন। ২০১৮ সালে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও সেই সময় সবাই দেখেছে দিনের ভোট কীভাবে রাতে হয়েছে।

সুতরাং এই সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠ নির্বাচন হবে না, সেটা প্রমাণিত। আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে গণতন্ত্র সুরক্ষার নজির নেই। যোগ করেন রিজভী।

Link copied!