মে ১৩, ২০২৪, ০১:০০ এএম
শেরপুরের শ্রীবরদীতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে মার্কেট ভেঙে মূল্যবান জমি দখলের অভিযোগে মো. মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ১ সাবেক কমান্ডার আমিনুল ইসলামকে (৭০) কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শ্রীবরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।
গতকাল রোববার (১২ মে) দুপুরে শেরপুরের আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর মাহমুদ এই নির্দেশ দেন।
একই দিন দুপুরে বিচারক মো. আলমগীর মাহমুদ দু’পক্ষের দীর্ঘ শুনানি শেষে মো. আমিনুল ইসলাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে আদালত মামলায় মো. ফারুক মিয়াসহ অপর ১৫ জনকে অর্ন্তবর্তীকালীন জামিনের আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী তাজুমুল ইসলাম।
পুরো মামলার বিবরণ তুলে ধরে আদালত সূত্র জানায়, শ্রীবরদীর গোশাইপুর ইউনিয়নের মাটিয়াকুড়া-গাবতলী বাজারে স্থানীয় মৃত. আব্দুস ছাত্তারের ছেলে আবুল হাসেম ১৪ কক্ষবিশিষ্ট একটি টিনশেড বিল্ডিং মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছিলেন। ওই অবস্থায় এলাকার মার্কেটটির সঙ্গে থাকা এক খণ্ড জায়গা কেনার প্রস্তাব দেন মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম। আবুল হাসেম এতে রাজি না হলে তার সঙ্গে শত্রুতা সৃষ্টি হয়।
একপর্যায়ে আমিনুল ইসলাম এলাকাবাসীকে তার পক্ষে নিয়ে ওই মার্কেটের পাশ দিয়ে পার্শ্ববর্তী খলশেকুড়ি বিলে যাতায়াতের রাস্তা দাবি করেন। এতেও তিনি রাজি না হলে গত বছরের ২৯ এপ্রিল সকালে প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন নিয়ে আবুল হাসেমের মার্কেটের ভাড়ায় চালিত একপাশের অংশ ভেঙে ফেলেন। এছাড়া মালামাল লুটসহ প্রায় ৪ লাখেরও বেশি টাকার ক্ষতি ও ৩ ফুট জায়গা নিশ্চিহ্ন করে। সেই সঙ্গে মার্কেট সংলগ্ন আবাদি ভূমি থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমিতে মাটি, ইটের সুরকি ও ইট ফেলে জোর করে দখল করে রাস্তা নির্মাণ করেন।
এদিকে ঘটনার দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভাঙচুর ও দখল চালিয়ে গেলেও আবুল হাসেম ও তার পরিবারের আকুতিতে কেউ এগিয়ে যাননি। ওই ঘটনায় আবুল হাসেম বাদী হয়ে গত বছরের ২ মে আমিনুল ইসলামসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে শেরপুরের আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আদালতে একটি মামলা করেন।
প্রাথমিকভাবে থানা পুলিশের তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানানো হলও পরে বাদীপক্ষের নারাজীমূলে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে জামালপুরের পিবিআই। পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে ঘটনার আদ্যোপান্ত।
আদালতে জামিন নামঞ্জুরের পর মামলার বাদী আবুল হাসেম তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্য ত্রাস সৃষ্টি করে আমার মার্কেট ভাঙচুর, দখলসহ মূল্যবান জায়গাজমি দখল করে। এ সময় স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের কাছে দৌঁড়েও সহায়তা পাইনি। পরে আদালতে মামলা করলে উল্টো আমার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করেছে আসামিরাই।”
এসব ঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করে আবুল হাসেম বলেন, “বিলম্বে হলেও আজ স্বস্তি পেয়েছি।”
বাদীপক্ষের আইনজীবী তাজুমুল ইসলাম বলেন, “বিবাদীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাদের পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা নারাজি করলে পিবিআই সঠিক রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছেন। আজ আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোয় আমরা সন্তুষ্ট।”