সন্তান অকৃতকার্য হলে কী করবেন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ১২, ২০২৪, ১০:১২ পিএম

সন্তান অকৃতকার্য হলে কী করবেন

প্রতীকী ছবি

জিপিএ-৫ না পেলে কিংবা অকৃতকার্য হলে অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের ওপর চড়াও হন। এতে সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। এসএসসির ফল হস্তান্তরের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ অভিভাবকদের অনুরোধ করেছেন, সন্তান অকৃতকার্য হলে তাকে বকাঝকা করবেন না। কারণ এমনিতেই তাদের মন খারাপ থাকে। তার ওপর অভিভাবকদের এই চাপাচাপি সন্তানদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। কখনও কখনও তারা আত্মহত্যার মতো অপ্রীতিকর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।

সন্তানের প্রতি অভিভাবকের আশা থাকবে- কিন্তু অকৃতকার্য হলে তাকে বকাঝকা করা যাবে না। তৃতীয় বিশ্বের দেশে সন্তান পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে অভিভাবকরা নেতিবাচক মন্তব্য করে থাকেন। এতে সন্তানের ওপর মানসিক চাপ পড়ে। অকৃতকার্য হওয়ার পর সন্তানের কষ্ট দ্বিগুণ করা উচিত না। বরং তার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলুন। অভয় দেওয়ার চেষ্টা করুন।

বকাঝকার কুফল

মা-বাবাকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে সন্তানরা। অথচ বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশে অভিভাবকরা সন্তানদেরকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। মনোবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, সন্তান পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে মা-বাবার রাগ একটু উঠবেই। কিন্তু সেই কারণে সন্তানকে বকাঝকা করা একদমই ঠিক না।

“স্যার বলেছেন যে, তোমাকে পড়ানোর যোগ্যতা এই স্কুলে কোনো শিক্ষকের নেই”

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, আপনার সন্তানকে কর্কশ ভাষায় কিছু বললে তার মনে কতখানি দাগ কেটে যায়?

সন্তান যত বড় ক্লাসে ওঠে, ততই বাড়তে থাকে পড়াশুনার চাপ। এর মধ্যে পরীক্ষার ফল ভালো না হলে মা-বাবা যদি রাগারাগি করে, তাহলে সন্তান ভীষণ মুষড়ে পড়ে। একেই খারাপ রেজাল্ট, তার ওপর বাড়তি টেনশন হিসেবে মা-বাবার বকাঝকায় সন্তান ডিপ্রেশনের অতল গহ্বরে যেতে পারে।

সন্তান কেন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়

অভিভাবকরা অনেক সময় সন্তানের খারাপ ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় রাগ আসাটাই স্বাভাবিক। তবে ভাবুন তো, বকাঝকা করে সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতি করছেন নাকি ভালো করছেন? সুদূরপ্রসারী অর্থে সন্তানের ক্ষতিই হচ্ছে। কর্কশ ভাষায় শাসন করার চেয়ে শান্ত ও ধীরস্থির হয়ে সন্তান কেন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়, সেটা নিয়ে চিন্তা করা যেতে পারে। পরীক্ষার আগে পড়াশোনায় সন্তানের মনোযোগ ছিল কিনা কিংবা কতটুকু ছিল- সেটা নিয়েও পর্যালোচনা করা জরুরি।

মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি
প্রতীকী ছবি

পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় টমাস আলভা এডিসনকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পর ছোট্ট এডিসন তার মাকে জিজ্ঞাসা করলো, “মা, স্যার আমাকে কি বলেছে?” তখন টমাস আলভা এডিসনের মা শিক্ষকদের কথা একটু ঘুরিয়ে বললেন, “স্যার বলেছেন যে, তোমাকে পড়ানোর যোগ্যতা এই স্কুলে কোনো শিক্ষকের নেই।” সেই টমাস আলভা এডিসন পরবর্তীতে বিদ্যুৎ উদ্ভাবন করে জগদ্বিখ্যাত হয়েছিলেন।

এভাবে সুন্দর ভাষা ও শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে সন্তানকে উন্নত ও বুদ্ধিদীপ্ত কাজের দিকে ধাবিত করা যায়। অযথা বকাঝকা না করে সন্তানকে কাছে ডাকুন। তারপর সান্ত্বনা দিন। অতীতে যা হয়েছে, তা তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তাই সামনের দিন যাতে ভালো ফল করা যায়, সেই ব্যাপারে অভয় দিন। এছাড়া আগামী দিন মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে বলুন।

আরও পড়ুন: গণিতে ফেল করায় আত্মহত্যা প্রিন্সের

যেসব কারণে সন্তান অকৃতকার্য হয়:
১. মনোযোগের ঘাটতি;
২. ডিসিপ্লিনের অভাব;
৩. পুরো সিলেবাস কাভার করতে না পারা;
৪. শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা;
৫. বিষণ্নতা;
৬. পড়াশুনার জন্য সময়ের সমন্বয় সাধনে ব্যর্থতা;
৭. বহুবিধ কারণ।

চোখে চোখে রাখুন সন্তানকে

পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর বা আশানুরূপ ফল না হলে সন্তান অনেক বিষণ্ন হয়ে পড়ে। এই বিষণ্নতা অনেক সময় তার নিজের মধ্য থেকে আসে। আবার কখনও পারিপার্শ্বিক চাপের কারণে হয়।

অপ্রীতিকর সিদ্ধান্ত
প্রতীকী ছবি

পরীক্ষায় খারাপ ফল মেনে নিতে না পেরে আপনার সন্তান যেন অপ্রীতিকর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। অভিভাবক হিসেবে সন্তানের আরও যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি, সেগুলো নিম্নরূপ:

  • বিষণ্ন হয়ে পড়ছে কিনা খেয়াল রাখুন
    পরীক্ষা খারাপ ফল করলে এমনিতেই মন খারাপ হয় সন্তানদের। তার ওপর পারিবারিক চাপ তাদের মধ্যে ট্রমা সৃষ্টি করতে পারে। ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ফলে তারা অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এমনকি নিজের জীবন শেষ করে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তাই অভিভাবক হিসেবে আপনার উচিত সন্তানের দিকে খেয়াল রাখা। সন্তানের বিষণ্নতা যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়, তাহলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। এক্ষেত্রে আপনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাইকিয়াট্রি বিভাগে যেতে পারেন। সেখানে অল্প খরচে বিভিন্ন মানসিক সমস্যার চিকিৎসা করানো হয়ে থাকে।
  • পাবলিকলি শেমিংয়ের সময় সহানুভূতি দেখান
    খারাপ ফলের কারণে স্কুলে আপনার সন্তানকে তার বন্ধু বা শিক্ষকরা পাবলিকলি শেমিং করলে তখন তাকে আপনি নতুন করে লজ্জা দেবেন না। পাবলিক শেমিংয়ের অনুতাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যার মতো পদক্ষেপও নিয়ে ফেলে। কাজেই মনে রাখবেন, অভিভাবক হিসেবে আপনার সন্তানের মানসিক অবস্থা বোঝাটা বেশ জরুরি। তাকে শেমিং করা হলে বাসায় এসে বা অন্য কোথাও সহানুভূতি দেখান। তাকে বোঝান- ভুল হতেই পারে। পরবর্তীতে যেন সেই ভুল না হয়, সেদিকে এখন থেকেই নজর দিতে হবে।
  • তুলনা করবেন না
    অমুকের ছেলে বা মেয়ে ভালো করেছে, তুমি ভালো রেজাল্ট করতে পারলে না কেন? তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর বেশির ভাগ অভিভাবকই এই ভুলটা করে থাকেন। অন্য ছেলেমেয়ের সঙ্গে তুলনা করলে সন্তানের মধ্যে হীনমন্যতা তৈরি হয়। আপনি জেনেশুনে আপনার সন্তানকে প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে লাগিয়ে দেবেন? অভিভাবকরা মনে করে থাকেন, সন্তানদের ভালোর জন্যই তারা বলে থাকেন। অথচ তারা যে সন্তানের কত বড় ক্ষতি করছেন, তা নিজেরা বুঝতে পারেন না। যখন বুঝতে পারেন, তখন আর কিছুই করার থাকে না। কাজেই সময় থাকতেই সাবধান হোন। অন্য ছেলেমেয়ের সঙ্গে নিজের সন্তানের তুলনা করা বন্ধ করুন।

অভিভাবকরা সন্তানের মঙ্গল চিন্তায় অনেক সময় বাড়াবাড়ি করে ফেলেন। যা সন্তানের জন্য হিতে বিপরীত হয়ে যায়। সন্তানকে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে কখনোই ভালো ফল করানো যায় না। পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য দরকার পরিচর্যার। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে- এটাই হোক অভিভাবকদের লক্ষ্য।

Link copied!