কক্সবাজারের হোটেল রুম থেকে দুই অপহৃতকে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২, ০৪:০২ এএম

কক্সবাজারের হোটেল রুম থেকে দুই অপহৃতকে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪

কক্সবাজারে পুলিশ পরিচয়ে দুই পর্যটককে অপহরণ করে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল একটি চক্র। অপহরণকারীরা ৪টি বিকাশ নম্বর দিয়ে ওই টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে ৯৯৯-এ এক পর্যটকের স্ত্রীর ফোন পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ।

জানা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ শেষে চট্টগ্রামে ফেরার পথে দুই পর্যটককে অপহরণ করে চক্রটি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেন চট্টগ্রামের পর্যটক মো. নুরুল আইয়ুব (৪০)। এদিন রাতেই বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত ৪ অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

গ্রেফতার ৪ জনের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালির মৃত আবদুর রহমানের ছেলে মো. রুবেল (৩১) ও ঈগাঁওয়ের মৃত শামসুদ্দিনের ছেলে মো. সালাউদ্দিন দুই পর্যটককে অপহরণ করে বন্দী করে রাখা হোটেল সীপার্ল ওয়ানের কর্মচারী। তাঁদের রবিবার রাতেই নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ না করে হোটেল কক্ষ ভাড়া দেওয়ার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়।

ভুক্তভোগী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতার দুই কর্মচারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার দুই পর্যটকের ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া বুধবার সকাল ৯টার সময় অপহরণের সাথে জড়িত ঈগাঁওয়ের নূর আজিজেরে ছেলে আশিক (২৮) এবং মৃত মনসুর আলীর ছেলে মো. মোবারক আলীকে (৩০) হোটেল কক্স টুডের সামনের গলি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

জানা যায়, মামলার বাদি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চুন্নাপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে নুরুল আইয়ুব চৌধুরী ও তাঁর বন্ধু কর্ণফুলী উত্তর বন্দর গ্রামের মো. নেওয়াজ নাছির ২টি মোটরসাইকেল নিয়ে শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০ টার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে রওনা দেন। রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টায় তারা কলাতলী সমুদ্র সৈকতে পৌঁছেন। এরপর সকাল সাড়ে ৮টায় কলাতলীর আলফা ওয়েব গেস্ট হাউজে কক্ষ ভাড়া করেন। সকাল ১০টার সময় মামলার বাদি নুরুল আইয়ুব ওই গেস্টহাউজের ৬ষ্ঠ তলায় অবস্থিত চায়নারোজ স্পা সেন্টারে স্পা করেন। সেখানে স্পা কর্মী রিয়া তাঁর পেশা ও আয় জেনে নেন। স্পা শেষ করে আবার হোটেলের কক্ষে ফিরে আসেন। পরে বেলা ৪টায় তাঁরা মোটরসাইকেল যোগে চট্টগ্রামে ফেরার জন্য রওনা দেন।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঈদগাঁও বাজারে পৌঁছালে ১টি মোটরসাইকেলে দুই যুবক নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে গতিরোধ করে বলেন, স্যার আসছেন। ২০-২৫ মিনিট পর আরেকটি মোটরসাইকেলে আরও দুই যুবক ঘটনাস্থলে পৌঁছে বন্ধু নেওয়াজ নাছির সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে আয়ুইবকে তুলে নেন। এ সময় তাঁর মোটরসাইকেল অন্য একজন নিয়ে নেন। পরে রাত ৯টার দিকে হোটেল সীপার্লের ৫-সি নম্বর কক্ষে নিয়ে দুজনকে মারধর করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

এজাহারে বাদি আরও উল্লেখ করেন, তাঁরা নির্যাতন সইতে না পেরে মামলার বাদি তাঁর স্ত্রী নাসরিন সুলতানার সাথে যোগাযোগ করেন। পরে তাঁর স্ত্রী নাসরিন সুলতানা, ভাগ্নে আজাদ ও তাঁর বন্ধু মিঠু মিলে ৪টি বিকাশ নম্বরে ১ লাখ ৯০  হাজার টাকা মুক্তিপণ পাঠান। একই সময় নাসরিন সুলতানা ৯৯৯-এ ফোন করে ট্যুরিস্ট পুলিশকে বিস্তারিত জানান। পরে ট্যুরিস্ট পুলিশ অভিযান চালিয়ে হোটেল সীপার্ল গেস্ট হাউজ থেকে অপহৃতদের উদ্ধার করেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, বুধবার সকালে অপহরণে জড়িত এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এরা ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকারও করেছে। এদেরকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হবে।

Link copied!