ট্রাকেই যাত্রীর ছদ্মবেশে ছিল ডাকাতরা, একজনকে হত্যার পর লুটল গরু ব্যবসায়ীদের ১৪ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ২৯, ২০২৩, ১০:৪৬ পিএম

ট্রাকেই যাত্রীর ছদ্মবেশে ছিল ডাকাতরা, একজনকে হত্যার পর লুটল গরু ব্যবসায়ীদের ১৪ লাখ টাকা

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত গরু ব্যবসায়ীদের একজন ইউনুস আলী (৩০)। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী গরু ব্যবসায়ীদের ট্রাকেই যাত্রীর ছদ্মবেশে ছিল ডাকাতরা। পথে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকা পার হলে ট্রাকের ওই ৯ আরোহী গরু ব্যবসায়ীদের ওপর হঠাৎ লাঠি, বাটাম, টর্চ দিয়ে হামলা শুরু করে। একপর্যায়ে ব্যবসায়ীদের হাত-পা, মুখ, চোখ বেঁধে ফেলে তারা। মারধরের একপর্যায়ে এক ব্যবসায়ী মারা যান। লুট হয় ঢাকায় পশুর হাটে গরু বিক্রি করা সাড়ে ১৪ লাখ টাকাও। গরু বিক্রি করে ভাড়ায় ওই ট্রাকে করে বাড়িতে ফিরছিলেন ওই পাঁচ ব্যবসায়ী। 

গতকাল বুধবার রাতে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের আগ্রাণ এলাকা থেকে নিহত ব্যবসায়ী সাহিদুল ইসলামের (৫৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আহত তিনজনকে উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

নিহত সাহিদুল ইসলামের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নিজবলাই গ্রামে। আহত ব্যক্তিরা হলেন সারিয়াকান্দির নিজবলাই গ্রামের রেজাউল করিম (৬০), আব্দুস ছালাম (৭০), তাঁর ছেলে সবুজ হোসেন (৩৫) ও সোনাতলা উপজেলার সোনাকানিয়া গ্রামের ইউনুস আলী (৩০)। ইউনুস আলী ও সবুজ হোসেনকে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন গণমাধ্যমকে জানায়, রাজধানীর বাড্ডা এলাকার আফতাবনগর হাটে ১৬টি গরু বিক্রি করে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা পান ওই পাঁচ ব্যবসায়ী। পরে তারা গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দেন। তাঁরা বাড্ডা থেকে একটি ট্রাকে প্রতিজন ৫০০ টাকা করে ভাড়া মেটান। ট্রাকটি গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকা পার হলে ট্রাকের ৯ আরোহী হঠাৎ করে স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়। তারা হঠাৎ লাঠি, বাটাম, টর্চ দিয়ে ব্যবসায়ীদের পেটানো শুরু করে। একপর্যায়ে ব্যবসায়ীদের হাত-পা, মুখ, চোখ বেঁধে ফেলে তারা। 

মারধরে ব্যবসায়ী সাহিদুল মারা যান। এ সময় ওই ব্যবসায়ীদের টাকাপয়সা কেড়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে গতকাল সারা দিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে রাতে সাহিদুলসহ চারজনকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের আগ্রাণ পেট্রলপাম্পের পাশে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। বাকি একজনকে অন্য কোথাও ফেলে দেওয়া হয়। পরে আহত ব্যবসায়ীদের দুজন আগ্রাণ পেট্রলপাম্পে এসে বিষয়টি পুলিশকে জানালে বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার ও আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউনুস আলী বলেন, আমরা বগুড়ায় যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজছিলাম। বাড্ডা এলাকায় একটি ট্রাকে আট থেকে নয়জন ব্যক্তি ছিল। রংপুর যাবো জানালে তাঁরা ওই ট্রাকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে ভাড়া নেবে বলে জানায়। এরপরই সবাই উঠি ওই ট্রাকে।

নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) রাজীব আল শরীফ বলেন, নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম থানায় রাখা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনকে বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ ও একজনকে চাটমোহর থানার পুলিশ উদ্ধার করেছে। ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলাও প্রক্রিয়াধীন। দ্রুতই এরা ধরা পড়বে।

Link copied!