কবিতাময় কবিগুরু

হাসনাত আসিফ কুশল

মে ১১, ২০২৪, ০২:০৫ এএম

কবিতাময় কবিগুরু

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ফাইল ছবি

১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ দেহত্যাগের আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যকে যা দিয়ে গেছেন, তা একেবারেই বিরল।

একাধারে তিনি সাহিত্যিক, কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও দার্শনিক।

জ্ঞানের সব শাখায় তার বিচরণ। হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথের কথাই বলছি।

এই রবীন্দ্রনাথই ১৯১৩ সালে এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন। গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপ্রতীম পুরুষ রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে দু’চারটে কথা না বলেও থাকতে পারছি না। চলুন কবিগুরুর জীবন ও সাহিত্য প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা করা যাক-

৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলনের স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার প্রথম মুদ্রিত কাব্য ‘কবিকাহিনী’। রবীন্দ্রনাথের প্রথম ছোটগল্প ‘ভিখারিণী’ ১৮৭৭ সালে, প্রথম নাটক ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ ১৮৮১ সালে এবং প্রথম উপন্যাস ‘বৌঠাকুরাণীর হাট’ ১৮৮৩ সালে প্রকাশিত হয়।

১৮৭৪ সালে তার প্রথম কবিতা ‘অভিলাষ’ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

রবীন্দ্রনাথের জীবনী পড়ছি, আর তার কবিতার প্রসঙ্গ আনবো না, তা কি হতে পারে? না। তাই রবীন্দ্রনাথের কবিতার অল্প কয়েকটা পঙ্কতি এখানে ব্যবহার করছি-
‘গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে’ আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হ’ল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খর-পরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।’

কবি রবীন্দ্রনাথের এই কবিতার নাম ‘সোনার তরী’। ক্ষুদ্র এই জীবনের মায়া কাটিয়ে আমাদের একদিন চলে যেতে হবে অসীম শূন্যতায়। এই জগতে আমাদের কোনোকিছু অবশিষ্ট থাকবে না। শুধু পড়ে থাকবে আমাদের কর্ম। সেই কর্মের কারণেই মানুষ আমাদের মনে রাখবে যুগের পর যুগ ধরে। রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী কবিতায় এটাই উঠে এসেছে।

রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক ঘরানার একটি কবিতা-
‘তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।’

এই কবিতার নাম- ‘অনন্ত প্রেম’। এটা রবীন্দ্রনাথের প্রেম পর্বের কবিতা। কবিতায় প্রেমকে জীবন্ত করেছেন কবি। যদিও রবীন্দ্রনাথের সব কবিতায়ই প্রেম জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তারপরেও ‘অনন্ত প্রেম’ কবিতায় প্রেমের সার্বজনীনতা তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে ‘তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি/ শত রূপে শত বার/ জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার’- পঙ্কতি তিনটির মধ্য দিয়ে কবির মধ্যেকার প্রেমের উচ্ছ্বাস জাগরূক হয়ে উঠেছে। কবিতার একজন পাঠকের দৃষ্টিতে এটা হতে পারে প্রেমে সচেতন হওয়ার বহিঃপ্রকাশ।

সবশেষ রবীন্দ্রনাথের ‘নয়ন তোমারে দেখিতে পায় না’ কবিতাটির একাংশ আওড়ালাম।
‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।’

জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে ১৮৬১ সালের ৭ মে জন্ম নেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট প্রয়াত হন তিনি। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।

Link copied!