বিএনপির পদ হারানোতে খুশি তৈমুর আলম

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৪, ২০২২, ০১:১০ এএম

বিএনপির পদ হারানোতে খুশি তৈমুর আলম

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করায় বিএনপির দলীয় পদ হারিয়ে অসন্তুষ্টির বদলে খুশি হয়েছেন তৈমুর আলম খন্দকার। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যপদ থেকে অব্যহতি পাওয়া রাজনীতিবিদের ধারণা, বিএনপির পদ না থাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ভোট পাবেন তিনি আসন্ন নাসিক নির্বাচনে।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি বলেন, আমার ক্ষতির কিছু নেই। আমাকে অব্যহতি দেওয়ার কারণে আমি রিকশাওয়ালাদের, ঠেলাগাড়ি ওয়ালাদের, মোটর শ্রমিকদের, হোটেল শ্রমিকদের তৈমুর। আমি সেখানেই ফিরে গেলাম।

এখনও অব্যাহতির চিঠি পাননি তিনি

অব্যাহতির খবর জানেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, আমি বিভিন্ন মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। আমার কাছে কোন চিঠি আসেনি। ঘটনা যাই হোক আমি দলীয় সিদ্ধান্তে খুশি। খবর পাওয়ার পর আমি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।

মেয়র নির্বাচনের পথ সুগম 

ধন্যবাদ কেনো জানিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারণ তারেক রহমান এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচন করার পথটা সুগম করে দিয়েছে। কারণ আমাকে অনেক জিজ্ঞেস করে ' আপনি আবার বসে যাবেন কিনা। এখন দল থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণে আমার কোন অভিভাবক রইলো না যে আমারে বসে যেতে বলবে। আমি সেই জায়গা থেকে মুক্ত হয়ে গেলাম।

তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালে যে মেয়রকে পাশ করানোর জন্য আমাকে বসে যেতে বলা, যে মেয়রের পাশের পথ সুগম করা হয়েছিল সে এবার আমার প্রতিদ্বন্দী। তিনি আর বলেন, ব্যাক টু দ্যা পেভিলিয়ন। আমি আমার আসল জায়গায় ফিরে গেলাম। মানুষ আমাকে মজলুম জনতা বলে, আমি সাধারন মানুষের কাছেই থাকতে চাই।

ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া পূরণ হবে

এতদিন বিএনপির হয়ে কাজ করতে গিয়ে কি আপনি অখুশি ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'না ঠিক সেটা নয়। তবে মানুষের একটা চাওয়া পাওয়া আছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে আদমজী মিলের শ্রমিক হওয়ার জন্য বহু চেষ্টা করেছি এবং শ্রমিক নেতাদের সাধু ছিলো , সেই সাধুর যে পির সাহেব ছিলো তার কাছে গিয়ে মুরিদও হয়েছি। আর ওই পির সাহেবের সেবা করতে করতে আমি ওই দরবারের সেক্রেটারি হয়ে গেছিলাম। আমার উদ্দেশ্য পীর সাহেবকে খুশি করা ছিলো না, সাধুকে খুশি করে আদমজী মিলের শ্রমিক হবো। তারপর নেতৃত্ব করবো কিন্তু আমি শ্রমিক হতে হতে আদমজী মিল ই ভেঙে গেছে। সরকার আদমজী মিল বিলুপ্ত করে দিছে। নতুবা আমি আইনজীবী বা রাজনীতিবিদ না হয়ে নিজেকে শ্রমিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতাম।'

তিনি আরো বলেন, 'আমার উদ্দেশ্য গণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করা। একটা দলের বাইন্ডিংয়ে থাকলে সার্বিকভাবে আন্দোলন করা যায়না। এখন আমি দলের বাইন্ডিয়ে নাই তাই আমি যেটা ভালো বুঝবো সেটা করবো।' আমি একজন কলামিস্ট। দেশের স্বার্থে যেটা ভালো সেই কলামটাই আমি লিখবো জানিয়ে তৈমুর আলম বলেন, ভয় পায় কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর। আমি মজলুমের জননেতা। আমি মজলুমের পাশে ছিলাম আর তাদেরকেই সাথে নিয়ে থাকতে চাই। আমার জন্ম রাজপথে, আর মৃত্যুও যেনো রাজপথেই হয়।'

আগেও পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল

উল্লেখ্য, বিএনপি আগে থেকেই সব ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনেও কোনো প্রার্থী দেয়নি। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছেন তৈমুর আলম খন্দকার। এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়েছিল। রবিবার (২ জানুয়ারি) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্দেশিত হয়ে জানানো হচ্ছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলরের সদস্য পদ থেকে আপনাকে (তৈমূর) প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না দলটি। এ কারণে এবারের স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। তবে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে স্বতন্ত্রভাবে লড়তে দেখা গেছে। তৈমুরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতীক নিয়ে নাসিক নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

তবে দলীয় সূত্রে  জানা যায়,  তৈমুর আলম খন্দকার দলের সিদ্ধান্ত মানেন নি। কারণ দল এই সরকারের অধীনে স্থানীয় ও জাতীয় কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। সেখানে উনার মতো একজন উপদেষ্টা পদে সদস্য হয়ে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে নারায়নগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।সেই কারণে তাকে সেই পদ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনের পর তৈমুর আলম খন্দকারকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য করা হয়।

Link copied!