ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির সামাল দিতে কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশ?

মিতালী মন্ডল

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩, ১০:১৭ পিএম

ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির সামাল দিতে কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশ?

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ইতিমধ্যে ঘটে গেছে স্মরনকালের সবথেকে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তুরস্কসহ অন্য দেশের ভূমিকম্পের পর তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে অবিলম্বে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া উচিত বাংলাদেশের। কারণ ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এমন ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে তা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, ভূমিকম্প মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত রয়েছে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষায়,  পরিকল্পিত নগরায়ন এবং বিধি মেনে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন তৈরি-ভূমিকম্প প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান অস্ত্র হতে পারে। 

বাংলাদেশে কি ভূমিকম্প হতে পারে

বঙ্গোপসাগরের উত্তরে আন্দামান থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাবডাকশন জোন বরাবর ৬শ’ কিলোমিটারের একটি সাইসমিক গ্যাপ রয়েছে। আমাদের দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তি এই সাইসমিক গ্যাপে জমা হয়ে আছে। এখান থেকে ৮ মাত্রার মতো শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তা যদি সাগরতলে হয় তাহলে সেই ভূমিকম্প সুনামি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞের মতে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই আমাদের দেশে সুনামি ও ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি। চট্টগ্রাম ও সিলেট ভূমিকম্পের হট জোনে অবস্থান করছে। তবে বেশি চিন্তা রাজধানী ঢাকা নিয়ে। কেননা ঘনবসতি ও অপরিকল্পিত ভবনের কারনে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি বড় ধরনের বিপর্যয়ে ফেলতে পারে।

কতটা ভয়াবহ হতে পারে ঢাকার পরিস্থিতি

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) যৌথ জরিপে বলা হয়, সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলে কেবল রাজধানী ঢাকার প্রায় ৩ লাখ ২৬ হাজার অবকাঠামোর মধ্যে ৭২ হাজার ভবন ধসে যাবে। এতে অসংখ্য লোকের প্রাণহানি হবে।

বন্যা ও সাইক্লোন দুর্যোগের প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও প্রশংসিত হলেও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে এর তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে।

এক্ষেত্রে ,এখন থেকেই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাকে নিম্নতম পর্যায়ে রাখা এবং ভূমিকম্প পরবর্তী বিপর্যয় সামাল দেয়ার প্রস্তুতির উত্তম পরিকল্পনা রাখা উচিৎ।

ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় কতটা প্রস্তুত

ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রস্তুতি সম্বন্ধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলি আহমদ খান বলেন, ভূমিকম্প মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি খুবই অপ্রতুল। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়, যার জন্য ন্যাশনাল অপারেশন সেন্টার দরকার। বাংলাদেশে এখনো এ ধরনের কোনো সংস্থা নেই। এছাড়া ঢাকায় ভূমিকম্প হলে মেগা স্ট্রাকচারগুলো ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে উদ্ধার কাজ চালানো অসমম্ভব হবে।

তবে আগাম প্রস্তুতির কথা জানান দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ভূমিকম্পের মত দূর্যোগ মোকাবেলায় ৬৬ হাজার প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন। এর মধ্যে আমরা ৪৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আসা করি শীঘ্রই বাকি সংখ্যাও পূরণ হবে।

এছাড়া উদ্ধার করার জন্য সরঞ্জাম ইতিমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কাছে দিয়েছি। এছাড়া ২টি হেলিকপ্টার ক্রয় করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি, তবে দূর্যোগে কবলিত হলে অবশ্যই ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়।

ভূমিকম্প প্রতিরোধে যে বিষয়গুলো নিয়ে অবশ্যই ভাবা উচিৎঃ 

১।অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বিধি মেনে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন তৈর করা।

২।একটি ভবন তৈরি হওয়ার পর এর ব্যবহার শুরুর আগে একটি অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেয়া, যেখানে ভবনটি নির্মাণে সব ধরনের নিয়ম মানা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা।

৩।বাড়িঘর ও হাসপাতালসহ সরকারী-বেসরকারী ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত।

৪।ঘটনাকালে স্মার্টফোনের মাধ্যমে জরুরি খবর পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

৫।তরুণদের মধ্যে সতর্কতা তৈরি করা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা।

৬। ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা দরকার।

Link copied!