ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল দোহারে, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বিশেষ প্রতিবেদক

মে ৫, ২০২৩, ০৮:১৬ পিএম

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল দোহারে, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বাংলাদেশের মানুষ যে ভূমিকম্পটি অনুভব করলো আজ ভোর ৫ টা বেজে ৫৭ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে সেটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার দোহার উপজেলায়। তবে প্রথমে দ্য ইউরোপিয়ান মেডেটারিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার—ইএমএসসি জানিয়েছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল হিসাবে নরসিংদী জেলায়। পরে তারা তথ্য প্রকাশের পাঁচ মিনিটের মধ্যে তথ্য সংশোধন করে জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল হিসাবে ঢাকার দোহার উপজেলায়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস-ও একই তথ্য দিয়েছে। 

প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ভূমিকম্পটিকে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ২ মাত্রার বলা হলেও আমেরিকার ভূ-তাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সংশোধিত তথ্য অনুসারে ভূমিকম্পটি মাত্রা ৪ দশমিক ৩। এই মানও হয়ত কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে অধিকতর তথ্যের ভিত্তিতে। ভূমিকম্পটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে সৃষ্টি হয়েছে। ভূমিকম্পটি যে স্থানে সৃষ্টি হয়েছে তার জিয়ো লোকেশন হলও ২৩ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৯০ দশমিক ২৭ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ (23.546°N 90.272°E)। 

ঢাকার এত কাছে এত বড় মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার ইতিহাস খুবই কম। ঢাকার এত কাছে এত সক্রিয় ভূ-চ্যুতি রয়েছে বলে এ নিয়ে খুবই শংকা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকায় ভবনসহ জানমালের বিপুল ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইন্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (বুয়েট) এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বিশেষজ্ঞ হিসবে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পে কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশের ভূমিকম্প বিষয়ক অভিজ্ঞদের একজন।

কিছুদিন আগে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে ড. মেহেদী বলেন, কখন ভূমিকম্প হবে, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে— তা কেউ জানে না। এখন ভূমিকম্প হলে এক রকম ক্ষয়ক্ষতি হবে। পরে হলে আরেক রকম হবে। আবার, ইতিমধ্যে যদি আমরা সক্ষমতার সাথে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক অনেক কম হবে।

অধ্যাপক ড. মেহেদী আরও বলেন, তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প আমাদেরকে আতঙ্কিত করেছে। এ জন্যই এ নিয়ে সরকার দ্রুত ট্রাস্ট পরিচালনায় এগুতে চায়।

আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (রাজউক অংশ) এর প্রকল্প পরিচালক আবদুল লতিফ হেলালী কিছুদিন আগে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ভয়াবহতা নিয়ে বড় আকারে একটি সমীক্ষা এবারই প্রথম করা হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত চার বছর সময় ধরে ওই সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। সরকারের ওই প্রকল্পে রাজউক অংশে বরাদ্দ ছিল ৫৩৬ টাকা। 

সেই সমীক্ষায় বলা হয়, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান দুটি বিপজ্জনক ফল্টলাইন বা চ্যুতিরেখার ওপরে। একটি ঢাকা মহানগরের সবচেয়ে কাছে টাঙ্গাইলের মধুপুর চ্যুতিরেখা, অন্যটি সিলেট অঞ্চলের ডাউকি চ্যুতিরেখা।

সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী সিলেটের ডাউকি চ্যুতিরেখায় ৭ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে ঢাকার কমপক্ষে ৪০ হাজার ৯৩৫টি ভবন ধসে পড়বে। দিনের বেলায় ভূমিকম্পটি হলে ১৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। আহত হবেন ২৮ হাজার মানুষ। এই মাত্রার ভূমিকম্পে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হবে ৫ বিলিয়ন ডলার, যা সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার সমান। ভূমিকম্পের পর ভবন মেরামত ও পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার (সাড়ে ৭৩ হাজার কোটি টাকা)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের শিক্ষক মাকসুদ কামাল ভোরের ভূমিকম্পটি সম্পর্কে বলেন, দোহার ও তার আশপাশের এলাকায় কয়েকটি ছোট নদী আছে। সেখানে চ্যুতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত কিছু নদী আছে। এমন চ্যুতিগুলো দিয়ে ছোট ভূমিকম্প হতে পারে। ভূতাত্ত্বিক পরিভাষায় এ ধরনের ভূমিকম্পের প্রক্রিয়াকে ‘নিওটেকটনিক’ বলা হয়। এই নিওটেকটনিক প্রক্রিয়ার অংশ আজ সকালের ভূমিকম্প। সাধারণত, নিওটেকটনিক চ্যুতি থেকে বড় ভূমিকম্প হয় না। যেমনটা আজ সকালে হয়েছে।

ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ মাকসুদ কামাল আরও বলেন, আমার গবেষণা মতে, আজকের ভূমিকম্পটির মতো এমন ভূমিকম্প দেশে আগেও হয়েছে। নদীপথ নিয়ন্ত্রণ করে যে ফাটলরেখা, তা দিয়ে যখন ভূমিকম্প হয়, সেই ভূমিকম্প বড় হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

 

Link copied!