মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর মামলার রায় আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ৩১, ২০২২, ০৮:২০ এএম

মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর মামলার রায় আজ

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় সোমবার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারে দেড় বছর আগে যে হত্যাকাণ্ড দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছিল, আলোচিত সেই মামলার রায়ের অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘন্টা সময়ের। 

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে সংঘটিত ওই হত্যাকাণ্ডের মামলায় রায় দেবেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। মামলায় আসামি হিসেবে রয়েছেন টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জন, বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে।

sinha

ওই হত্যাকাণ্ডের পরই বেরিয়ে আসে, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে কীভাবে বন্দুকযুদ্ধ সাজিয়ে খুন করে যাচ্ছিলেন পোশাকী বাহিনীর কর্মকর্তা প্রদীপ। আর তার ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনহাকেও হত্যা করে তাকে ‘বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা খুন হওয়ার পর প্রতিরক্ষা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজেদের ক্ষোভ নিয়ে এসেছিলেন প্রকাশ্যে।

সেই পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান ও পুলিশ প্রধান ঘটনাস্থলে গিয়ে বিরল এক সংবাদ সম্মেলনে একসঙ্গে বসে রাষ্ট্রীয় দুই বাহিনীর মধ্যকার সম্পর্কে অটুট রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তার এক মাসের মধ্যে কক্সবাজারের পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ বদলে ফেলা হয়। সব পরিদর্শককে সরানোর পর পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়।

prodib
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। ছবি: সংগৃহীত

সেই ঘটনার পর কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও কমে যায় লক্ষ্যযোগ্য হারে। সিনহা হত্যার আগের সাত মাসে যেখানে ১৮৪ জন মারা গিয়েছিলেন; পরের পাঁচ মাসে তা চারজনে নেমে আসে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস যে মামলা করেন, তার কাজও চলে দ্রুত গতিতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের পর র‌্যাব তদন্তভার নিয়ে পাঁচ মাসে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর অভিযোগ গঠন করে ২৯ কার্যদিবসে শুনানি করে গত ১২ জানুয়ারি রায়ের দিন ঠিক করে দেন বিচারক ইসমাইল।

সিনহা (৩৬) সেনাবাহিনীতে মেজর পদে ছিলেন। রোমাঞ্চপ্রিয় এই যুবক খুন হওয়ার দুই বছর আগে সেনাবাহিনীর চাকরি ছাড়েন অন্যভাবে জীবন শুরুর জন্য।

shipra-sinha
ডকুমেন্টারি টিমের সাথে সিনহা। ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকেই ছিল ভ্রমণের শখ, ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গিয়েছিলেন কক্সবাজারে। তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ। সিনহার মৃত্যুর পর তাদেরও নির্যাতন ও হয়রানিতে ফেলেছিল পুলিশ।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর ৫ অগাস্ট ওসি প্রদীপ দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয়জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন তার বোন। সাড়ে চার মাস পর ১৩ ডিসেম্বর র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

পরের বছর ২০২১ সালের ২৭ জুন সব আসামির উপস্থিতিতে বিচারক ইসমাইল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

প্রায় দুই মাস পর ২৩ অগাস্ট বাদী শারমিন ফেরদৌসের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। মামলায় মোট সাক্ষী ছিলেন ৮৩ জন। তার মধ্যে নয়জন প্রত্যক্ষদর্শীসহ ৬৫ জনের সাক্ষ্য নিয়ে রায় হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।

sinha 2

আসামি যারা

টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএন এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, টেকনাফ থানার কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং এএসআই সাগর দেব, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী স্থানীয় তিন ব্যক্তি নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ। আসামিরা সবাই রয়েছেন কারাগারে।

মামলা বিত্তান্ত

মামলা দায়ের: ২০২০ সালের ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের আদালতে। নয়জনকে আসামি করে।

বাদী: সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।

অভিযোগপত্র দাখিল: ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর। ১৫ জনকে আসামি করে।

তদন্ত কর্মকর্তা: র‍্যাব-১৫ এর কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ এএসপি মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। তার আগে তদন্ত করেছিলেন র‌্যাব কর্মকর্তা এসএসপি জামিলুল হক।

অভিযোগ গঠন:  ২০২১ সালের ৩১ জুলাই। সব আসামির উপস্থিতিতে।

সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু: ২০২১ সালের ২৩ অগাস্ট।

মোট সাক্ষী: ৮৩ জন। সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে ৬৫ জনের। তাদের নয়জন প্রত্যক্ষদর্শী।

সর্বশেষ সাক্ষী: তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।

Link copied!