সাদ্দাম-ইনানের নেতৃত্বে কেমন চলছে সংগঠন?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৪, ২০২৩, ১০:০২ এএম

সাদ্দাম-ইনানের  নেতৃত্বে কেমন চলছে সংগঠন?

ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ বুধবার (৪ জানুয়ারি)। ১৯৪৮ সালের এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠাকালীন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এর নাম হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

নাঈমউদ্দিন আহমেদ প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়কের ভূমিকা পালন করলেও পরবর্তীতে সভাপতি মনোনীত হন দবিরুল ইসলাম। আর প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খালেক নেওয়াজ খান। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সাদ্দাম হোসেন সভাপতি ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ছাত্রলীগের সোনালী অধ্যায়:

১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে অধিকার আন্দোলনে সংগঠনটি জড়িয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠার পর সর্বপ্রথম মাতৃভাষা বাংলার জন্য সংগ্রাম করেছিল ছাত্রলীগ। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত  সভাপতি খালেক নেওয়াজ খান ও কামরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক এম ও ওয়াদুদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতরর হয়ে ওঠে।

 ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট  নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন যাতে ছাত্রলীগ তাঁর ভ্যানগার্ড ছিল। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে কে এম ওবায়দুর রহমান, সিরাজুল আলম খান, সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী,আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা চালায়। ৬৯’র গণঅভুত্থানে তোফায়েল আহমেদ, আ স ম আব্দুর রব, নূরে আলম, শাহজাহান সিরাজ, ইসমত কাদির গামার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

সত্তরের নির্বাচনেও তৎকালীন ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করত ছাত্রলীগ। এছাড়াও, জিয়ার সামরিক শাসনামলে, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মো. আব্দুর রহমান, হাবিবুর রহমান, অসীম কুমার উকিলসহ ছাত্রলীগের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

জাতীয় নেতা তৈরির কারখানা ছাত্রলীগ

বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে একসময় বলা হতো জাতীয় নেতা তৈরির কারখানা। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মনি, কেএম ওবায়দুর রহমান, সিরজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আসম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, নূরে আলম সিদ্দিকী, শেখ শহীদুল ইসলাম, মনিরুল হক চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন,জাহাঙ্গির কবির নানক, আব্দুর রহমানসহ সবাই ছাত্রলীগ থেকে জাতীয় পর্যায়ে উঠে এসেছেন। এদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ করলেও তারা সবাই ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মযজ্ঞ

বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করায় আন্দোলন সংগ্রামের প্রয়োজন হয় না। তবে দেশের উন্নয়নে ও জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। করোনা মহামারির সময় লকডাউন চলাকালে লোকজন না পাওয়ায় কৃষকের ধান কেটে ঘরে পৌছে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সরকারের সাথে  বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করছে।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিনে সংবাদ সম্মেলনে বছরব্যাপী ঘোষণা করেন সংগঠনটির সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন। এতে লিখিত বক্তব্যে সাদ্দাম বলেন, “শেখ হাসিনার পরিকল্পিত 'স্মার্ট বাংলাদেশ' এর নেতৃত্ব দেবে ছাত্রলীগ, ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে এটিই আমাদের সংকল্প।”

সাদ্দাম হোসেন বলেন, “সময়ের প্রয়োজনে আজ থেকে ৭৫ বছর পূর্বে বাঙালির হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ও মুক্তির মহান নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বর্তমানেও সেই ছাত্রলীগ সময়ের প্রতিটি প্রয়োজনে নিজের সর্বোচ্চটুকু বিলিয়ে দেয়ার ব্রতকে ধারণ করে পথ চলছে।

“শেখ হাসিনার পরিকল্পিত 'স্মার্ট বাংলাদেশ' এর নেতৃত্ব দেবে ছাত্রলীগ, ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে এটিই আমাদের সংকল্প।”

তবে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছfত্রলীগ নেতাদের অনেককেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, মাঝে মাঝে  ছাত্রলীগের নামে চাঁদাবাজির ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমে  প্রচার হয়। এতে দলের ভাবমূর্তি দারুনভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।

সংগঠনটির সাবেক  সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, “আমরা জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি ছাত্রসমাজের মৌলিক সমস্যা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমরা বাসে চড়ে যাতায়াত করতাম। টাকা-পয়সা বাঁচানোর জন্য মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে নাশতা করতাম। কিন্তু এখন একদল ছাত্রনেতা শুধু টাকা আর ভোগবিলাসের রাজনীতি করেন।

প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ছাত্রলীগের কর্মসূচি

বুধবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এরপর সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমণ্ডিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অনাবাদী জমিতে শাক-সবজি-ফল চাষ, মাছ ও গৃহপালিত পশুপালনের উদ্যোগ গ্রহণ।

১. প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে 'স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ' শীর্ষক মতবিনিময়।

২.কনসার্ট ফর স্মার্ট বাংলাদেশ আয়োজন।

৩. বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুনর্মিলনী। 

৪.‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ: গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫ বছর' শীর্ষক স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ।

৫. ‘স্মার্ট বাংলাদেশ আইডিয়া কনটেস্ট’ আয়োজন।

৬. সব সাংগঠনিক ইউনিটের দলীয় কার্যালয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা।

৭. উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশব্যাপী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা' শীর্ষক প্রতিযোগিতা ও জাতীয়ভাবে ‘স্মার্ট ইউথ ক্যাম্প’ আয়োজন।

৮. শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে ‘শর্ট ফিল্ম কম্পিটিশন’ আয়োজন।

৯. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ডেভেলপমেন্ট কুইজ আয়োজন।

১০.নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে 'নারীর ক্ষমতায়ন ও শেখ হাসিনা' শীর্ষক বক্তব্য প্রতিযোগিতা।

১১ ‘সজীব ওয়াজেদ জয় প্রোগ্রামিং কনটেস্ট’ আয়োজন।

১২ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ' ও 'স্মার্ট ক্যাম্পাস' এর উপর আন্তর্জাতিক একাডেমিক কনফারেন্স

>১৩ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ অলিম্পিয়াড

১৪. দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরষ্কারপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাথে চা-চক্র আয়োজন।

১৫ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: আওয়ার কান্ট্রি, আওয়ার ড্রিম’ শীর্ষক পোস্টার প্রেজেন্টেশন।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, “সময়ের প্রয়োজনে আজ থেকে ৭৫ বছর পূর্বে বাঙালির হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ও মুক্তির মহান নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বর্তমানেও সেই ছাত্রলীগ সময়ের প্রতিটি প্রয়োজনে নিজের সর্বোচ্চটুকু বিলিয়ে দেয়ার ব্রতকে ধারণ করে পথ চলছে।

এছাড়া ওইদিন সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন এবং বিকেল ৩টায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ছাত্রলীগ।

Link copied!