সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি: যেভাবে বাঁচতে পারতো ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীর প্রাণ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ৬, ২০২২, ০৫:০৭ এএম

সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি: যেভাবে বাঁচতে পারতো ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীর প্রাণ!

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ৫/৬ কনটেইনারে কেমিক্যাল রয়েছে জানা থাকলে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে আসা ফায়ারসার্ভিস কর্মীদের প্রাণ বেঁচে যেতে পারতো বলে মনে করেন চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস বিভাগের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন। রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মুঠোফোনে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে তিনি এ কথা বলেন।

ফায়ার সার্ভিসেসর এই সহককারী পরিচালক দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে আরও বলেন, “আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে সীতাকুণ্ড থেকে যখন ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নেভানোর জন্য আসে তখন তাদের কনটেইনারে কেমিক্যাল থাকার কথা জানানো হয়নি। কেমিক্যাল আছে তাদের জানালে তারা আগুন নেভানোর জন্য ভিন্ন ধরণের কৌশল গ্রহণ করতেন। তারা এত কাছে গিয়ে কখনও আগুন নেভানোর চেষ্টা করতেন না। কেমিক্যাল থাকলে আগুনে বিস্ফোরণ ঘটবে, এটা সবাই জানে।কেমিক্যালের বিষয়টি গোপন করায় ফায়ার সার্ভিসের ৯ জন ফায়ার ফাইটারসহ এতগুলো প্রাণহাণি হলো।”

এদিকে, বিএম কনটেইনার সূত্রে জানা গেছে, এই ডিপোতে প্রায় ২০ হাজার কনটেইনার ছিল। এর মধ্যে অধিকাংশ কনটেইনারে গার্মেন্ট পণ্য থাকলেও ৬/৭টি কনটেইনারে ছিল হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন আগুন নেভাতে আসে তখন তাদের জানানো হয়, কনটেইনারে গার্মেন্ট পণ্য আছে। কেমিক্যাল থাকার কথা জানানো হয়নি। 

আরও পড়তে পারেন-অনুমোদন ছাড়াই ডিপোতে কেমিক্যাল মজুত করা ছিল: বিস্ফোরক অধিদপ্তর

অন্যদিকে, কনটেইনার ডিপোতে গার্মেন্টস পণ্যের আড়ালে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কেমিক্যাল মজুত করা হয়েছিল। আর কেমিক্যালগুলো বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনমোদন ছাড়াই ডিপোতে মজুত করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন গণমমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

রবিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিস্ফোরক অধিদপ্তর জানায়, রাসায়নিক মজুতের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম অধিদপ্তরে তালিকাভুক্ত আছে  এর মধ্যে বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের নাম নেই। স্মার্ট গ্রুপ নিজস্ব কারখানায় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপাদন করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে আসছিল। 

আরও পড়তে পারেন: দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে সীতাকুণ্ডের আগুন

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে লাগা আগুনে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া ফায়ার সার্ভিসের ৯কর্মীসহ এখন পর্যন্ত ৪৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। 

আরও পড়তে পারেন: ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীসহ এখন পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে প্রথমে একটি কনটেইনারে আগুনের সুত্রপাত হয়। পরে আরও কয়েকটি কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। প্রথমে কেমিক্যাল কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এরপর আগুন ছড়াতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দুই শতাধিক কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দগ্ধ দুই শতাধিক ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ও অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ৫২ জন এবং অর্থোপেডিক বিভাগে ১০ ভর্তি রয়েছে। চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৫২ জন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।

তাদের বেশিরভাগেরই শ্বাসনালী পোড়া। তাদের বাঁচাতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। রবিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিএম ডিপো থেকে ৪০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখন যে মরদেহগুলো উদ্ধার হচ্ছে সেগুলো আগুনে পুড়ে বীভৎস রুপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। 

মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার জোনের সহকারী (এসি) কমিশনার শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাঁচলাইশ থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) মর্গে পাঠাচ্ছে। সেখানে মরদেহ শনাক্তের জন্য ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে। যাদের স্বজন নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। 

Link copied!