‘নেত্রী চাইলে যেকোনও সময় কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে’

নাশকতা মোকাবিলায় ব্যর্থতা: হুমকির মুখে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আ.লীগের কমিটি

মাহাবুব আলম শ্রাবণ

জুলাই ২৭, ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম

নাশকতা মোকাবিলায় ব্যর্থতা:  হুমকির মুখে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আ.লীগের কমিটি

সম্প্রতি রাজধানী জুড়ে যে তাণ্ডব ও নাশকতা চলেছে, তাতে রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও রাজপথ পাহারার বিষয়ে সাংগঠনিক দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতা অভাব সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে আওয়ামী লীগে।

দলের হাইকমান্ড থেকে রাজধানীর সব এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সতর্কাবস্থানে থাকার নির্দশনা দেওয়া হলেও যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা নগর, মিরপুরসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় দাঁড়াতেই পারেননি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা নগর ও আগারগাও থানার ২৭টি ইউনিটি কমিটি এরই মধ্যে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “ঢাকা মহানগরের কমিটি বাতিলের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিটি ভাঙার বিষয়টা আমার জানা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে যেকোনও সময় কমিটি ভেঙে দিতে পারেন।”

নেতাকর্মীদের সমন্বয়ের অভাবের বিষয়ে একমত হয়ে তিনি জানান, কমিটি-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে নানা গুঞ্জন আছে। নেতাকর্মীদের সমন্বয়ের অভাব ছিল এটা সত্যি। এটা নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা রয়েছে।

এদিকে কোনও শিক্ষার্থী হয়রানির মুখে পড়বে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ধ্বংসলীলার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনও সম্পর্ক ছিল না শিক্ষার্থীরা এসব করেনি এটাই স্পষ্ট  ও পরিষ্কার। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের হয়রানির শিকার তারা হবে না।”

আওয়ামী লীগের মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের
কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে কিনা

সাম্প্রতিক সময়ের সংকটে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের উত্তর-দক্ষিণের সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো রাজপথে ছিল না শক্ত কোনও অবস্থান। কমিটি বাণিজ্য, পদ বাণিজ্যের কারণেই আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কমিটির এই ভঙ্গুর দশা বলে দাবী একাধিক নেতাকর্মীর।

অনেকের অভিযোগ প্রায় ৩ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি তালিকা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল বটে তবে সেই তালিকা হস্তান্তরের পর থেকেই জানা যায়, টাকা নিয়ে বিভিন্ন অযোগ্য অনুপ্রবেশকারীকে কমিটিতে রাখা হয়েছে ও তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে ওই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

নেতাকর্মীরা বলেন, যখন সংকট শুরু হয় তখন দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বিভিন্ন জায়গায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এমনকি অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকেও মাঠে দেখা যায়নি। ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি যে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে নেই তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগরকে ঢেলে সাজাতে যাচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এই অবস্থার উন্নতি হলে ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে ও আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হতে পারে। কারণ এই দুই কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এ কারণে আওয়ামী লীগ দুটি কমিটিতে যারা রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করতে পারে, যারা দুঃসময়ে দলের জন্য কাজ করেছে ও ত্যাগী-পরীক্ষিত তাদের সামনে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দলের একটি কার্যনির্বাহী কমিটির সভা আয়োজন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এতে তিনি সম্প্রতি সময়ে নাশকতা ও পৈশাচিকতার সময় আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। তবে তার আগেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল গতকাল (শুক্রবার) ও অিাজ (শনিবার) দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আত্মসমালোচনা করছেন ও বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, আমরা এরই মধ্যে আমাদের অবস্থার পরিস্থিতি নিয়ে মূল্যায়ন করছি। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর আমরা বিষয়টা নিয়ে হাত দেবো।

একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা মনে করেন, ঢাকা মহানগরের উত্তর-দক্ষিণের বর্তমান যে নেতৃত্ব রয়েছে সেটা নিয়ে সংগঠন পুনর্গঠন করা অসম্ভব। এজন্য নতুন করে এখন আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কমিটি ঢেলে সাজানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। তবে এই ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে বা কিভাবে হবে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনও ধারণা পাওয়া যায়নি।

কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে না পারাকে সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে উঠতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল পদে থেকে দলের সংকট মুহূর্তে গা ঢাকা দেওয়া নেতা এমনকি দলের এমপিসহ প্রভাবশালী যাঁরা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন তাঁদের তালিকা করার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

গত ২৫ জুলাই এক বৈঠকে ওবায়দুল কাদের বলেন, গত কয়েক দিন ক্রাইসিস মুহূর্তে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা চরমভাবে ফুটে উঠেছে। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও দেখা গেছে। এই সমন্বয়হীনতা কাটাতে হবে। নেত্রী সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। যাঁরা দায়িত্বশীল পদে থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন, কেউ কেউ বিদেশে গেছেন তাঁদের তালিকা করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের।

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের শীর্ষ নেতাদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঢাকা মহানগরী ওয়ার্ড-থানার দীর্ঘদিন সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু নেতারা কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

Link copied!