আমলাতন্ত্র চাঙ্গা করতে বড় ধরনের পদোন্নতির পরিকল্পনায় অন্তর্বর্তী সরকার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১৮, ২০২৫, ০২:৪১ পিএম

আমলাতন্ত্র চাঙ্গা করতে বড় ধরনের পদোন্নতির পরিকল্পনায় অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি: সংগৃহীত

উপসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মকর্তাদের বহুল প্রতীক্ষিত পদোন্নতির তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার, যা একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে এবং এরপর যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এবার এই পদোন্নতিগুলো বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে। খবর ইউএনবি।

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) বৈঠকে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সার্বিক নথিপত্র, শৃঙ্খলা, দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতা, নৈতিকতা ও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড পর্যালোচনা করা হয়েছে। এসএসবি ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে এবং আরও দু-একটি বৈঠকের পর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।

সুত্র জানায়, পদোন্নতিযোগ্য প্রায় ৭ শতাধিক কর্মকর্তার চাকরিজীবনের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ শুরু করেছে সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ এসএসবি। কয়েকটি বৈঠকের পর এই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই উপসচিব পদে পদোন্নতির ঘোষণা আসতে পারে। পরের মাসে আসতে পারে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ঘোষণা। 

এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির থাকা পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় নতুন গতি এসেছে। জনপ্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, এরই মধ্যে এসএসবির কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ জুলাই বসেছিল বৈঠক। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই উপসচিব পদে এবং পরবর্তী মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। এসএসবির বৈঠক প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা।

৩০তম বিসিএস

২০১২ সালের ৩ জুন সরকারি চাকরিতে যোগদানকারী বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০২২ সালের ৩ জুন থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেন। কিন্তু নানা কারণে পদোন্নতি দীর্ঘ সময় ঝুলে ছিল।

২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদোন্নতির তথ্য আহ্বান করে। তবে এরপর আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কারণে প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ফলে প্রক্রিয়াটি আরও বিলম্বিত হয়।

৩০তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ২৭৭ জনসহ মোট ৩১৯ জন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ক্যাডার থেকে ডিএস পুলে আবেদন করা ২২৩ জন কর্মকর্তার তথ্য যাচাই করা হয়েছে। সব তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ২৫০ থেকে ২৮০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে।

২০তম বিসিএস

অপরদিকে, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় রয়েছেন ২০তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তারা। ২০১৯ সালে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করলেও, তারা পদোন্নতি পান ২০২১ সালে। সেই হিসাবে ২০২৩ সালে অতিরিক্ত সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন তারা। এবার সেই পদোন্নতি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

প্রশাসন ক্যাডারের ২৪৪ জন কর্মকর্তা ছাড়াও অন্যান্য ক্যাডার মিলিয়ে মোট ৩০০ জনের বেশি কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব পদে বিবেচনায় আছেন। তবে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ডিসি হিসেবে দায়িত্বপালনকারী ২০তম ব্যাচের ৪৩ জন কর্মকর্তাকে এই তালিকায় রাখা হয়নি বলে জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের ২১২ পদে কর্মকর্তা আছেন ৩৭০ জন। যুগ্ম সচিবের ৫০২টি পদে রয়েছেন ১ হাজার ৩৪ জন।

সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদসংখ্যা ১ হাজার ৪২০। বিপরীতে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৪০২ জন। অর্থাৎ প্রতিটি স্তরেই নির্দিষ্ট পদের চেয়ে উল্লেখযোগ্য কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন। ফলে পদ খালি না থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আগের পদেই কাজ করে যেতে হবে।

পদোন্নতির বিধিমালা অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদে পাঁচ বছর চাকরিসহ অন্তত ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলেই উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা। সে অনুযায়ী বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন ২০২২ সালের ৩ জুন। এরপর প্রায় তিন বছর হতে চলছে, কিন্তু তাদের এখনো পদোন্নতি হয়নি।

Link copied!