ব্যাংককে রাত ৩টা ৩ মিনিট। আলোচিত নারী উদ্যোক্তা রোবাইয়াত ফাতিমা তনি নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি পেলেন। তার প্রাণের মানুষ, স্বামী সাদাদ রহমান সাদ চিরতরে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাসে তনি তার শোকের কথা জানিয়ে লিখেছেন, “সে আর নেই। আমাকে সারাজীবনের জন্য একা করে রেখে চলে গেছে।”
তনি ও সাদের ভালোবাসার পথটি ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা। বয়সের ব্যবধান নিয়ে কটাক্ষ এবং সমাজের কঠোর সমালোচনার মুখেও তনি দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, “কে কি বলবে, তা ভাবিনি। শুধুমাত্র তার ভালোবাসা দেখেই বিয়ে করেছিলাম।”
সাদাদ রহমান ছিলেন তনির দ্বিতীয় স্বামী। জীবনের প্রথম সংসারের ব্যর্থতা ভুলে নতুন আশার আলোয় পথচলা শুরু করেছিলেন সানভিস বাই তনির এই উদ্যোক্তা। কিন্তু সেই জীবনের গল্পও থেমে গেল অকালে।
তনির সাথে সাদাদের প্রথম পরিচয় হয়েছিল পেশাগত কারণে। প্রথম দেখাতেই ভালো লাগা থেকে সম্পর্কের সূচনা। তাদের বিয়েটি প্রথমে অনেকটাই গোপন ছিল। পরে তাদের ছেলে সরফরাজের জন্মের পর তনির পরিবার মেনে নেয়।
তারা দু’জন প্রমাণ করেছিলেন যে ভালোবাসা কোনো বয়স মানে না। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে তারা নিজেদের ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় করেছিলেন। কিন্তু সাদাদ রহমান সম্পর্কে অনেকের কৌতুহল থেকেই যায়।
সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সাদাদের বাবা ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন চিকিৎসক। স্কুলজীবনে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর বাবার চাকরির সুবাদে ব্রিটেনে পাড়ি জমান। সেখানেই ও-লেভেল এবং এ-লেভেল সম্পন্ন করে লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে মার্কেটিংয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন।
পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যক্তিত্ব। এস.এস. স্টিল লিমিটেড, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস লিমিটেড এবং ফু-ওয়াং সেরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও, রংপুর ডিস্টিলারিজ অ্যান্ড কেমিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সালেহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
পেশাগত জীবনের পাশাপাশি সাদাদ দ্য চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অফ মার্কেটিং-এর সদস্য ছিলেন। জিএমজি এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট (মার্কেটিং ও প্রেস রিলেশন্স) এবং ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সামাহ রেজর ব্লেডস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মাস কয়েক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সাদাদ। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তনি তার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংকক নিয়ে যান। এ সময় তিনি বলেছিলেন, “জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছি। আমি কোনোভাবেই তাকে হারাতে চাই না।”তনি প্রাণপণ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেননি।
তাইতো তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফুটে উঠেছে একাকীত্বের গভীর যন্ত্রণা। তিনি লিখেছেন, “মানুষ যতটা ডিপ্রেশনে ভোগে, তার চেয়ে বেশি ভোগে একাকীত্বে। জীবনে একটা নিজের মানুষ থাকা জরুরি, যার কাছে মনের সব কথা বলা যায়। কিন্তু আমার সেই মানুষটা আর নেই।”