চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ২৯, ২০২৫, ১২:১৭ পিএম

চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের প্রথম একুশে পদকপ্রাপ্ত ও দেশবরেণ্য গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি উপলক্ষে আজ সোমবার রংপুর মহানগরী ও তার জন্মস্থান গঙ্গাচড়ায় স্মরণসভা, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মোনাজাতউদ্দিন দৈনিক জনকণ্ঠের উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহের জন্য গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় গিয়ে যমুনা নদীতে কালাসোনার ড্রেজিং পয়েন্ট থেকে ফেরিযোগে ফেরার সময় পা পিছলে নদীতে পড়ে তিনি মারা যান। ঘটনার পরদিন ৩০ ডিসেম্বর রংপুর শহরের মুন্সিপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

তার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ‘পা পিছলে পড়া’ না কি ‘ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকাণ্ড’—এই প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত। তৎকালীন বিএনপি সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম, বঞ্চনা ও বাস্তবতা তুলে ধরেছেন মোনাজাতউদ্দিন। মফস্বল সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এই সাংবাদিক ছিলেন একজন গবেষক ও সৃজনশীল লেখকও। তার লেখায় উঠে এসেছে গ্রামবাংলার অজানা বহু গল্প, যা পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে।

ছাত্রজীবনে বগুড়ার সাপ্তাহিক বুলেটিন পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি তার। পরে দৈনিক আওয়াজ, দৈনিক আজাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক সংবাদ এবং সর্বশেষ দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি নিজ উদ্যোগে ‘দৈনিক রংপুর’ পত্রিকা প্রকাশ করলেও আর্থিক সংকটে তা বন্ধ হয়ে যায়।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি নাটক, গল্প, কবিতা ও গানের ক্ষেত্রেও সক্রিয় ছিলেন। বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘করিম মণ্ডলের বৈঠকখানা’র পাণ্ডুলিপি লেখক হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— সংবাদের নেপথ্য, পথ থেকে পথে, নিজস্ব রিপোর্ট, কাগজে মানুষেরা, কানসোনার মুখ, চিলমারীর এক যুগসহ আরও অনেক বই।

সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি জীবদ্দশায় ও মরণোত্তর বহু পুরস্কারে ভূষিত হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতি পদক (১৯৮৪), ফিলিপস পুরস্কার, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স পুরস্কার, অশোকা ফেলোশিপ (১৯৯৫) এবং ১৯৯৭ সালে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক।

১৯৪৫ সালের ১৮ জুন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় জন্ম নেওয়া মোনাজাতউদ্দিন কৈলাশ রঞ্জন হাই স্কুল ও কারমাইকেল কলেজে পড়াশোনা করেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি আজীবন সত্য ও ন্যায়ের পথে সাংবাদিকতা করে গেছেন।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার পরিবারের উদ্যোগে কবর জিয়ারত, বিশেষ দোয়া মাহফিল ও এতিম শিশুদের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি রংপুর ও গঙ্গাচড়াসহ বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিক সংগঠনগুলো মোনাজাতউদ্দিনকে স্মরণ করে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।

Link copied!