ফুরিয়ে যাননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জবাব দিলেন ব্যাট হাতেই

মুবিন আহমেদ

অক্টোবর ২৬, ২০২৩, ০১:৫০ এএম

ফুরিয়ে যাননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জবাব দিলেন ব্যাট হাতেই

মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে শতক চারটি, সব কটিই আইসিসির টুর্নামেন্টে। ছবি: ক্রিকইনফো

২০২৩ বিশ্বকাপ তো দূরে থাক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারেই ‘ফুলস্টপ’ পড়ার মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। বিশ্রামের মোড়কে তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে একরকম দূরে রাখা হয়েছিল।

চলতি বছর ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ড সিরিজের পর আর জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এরপর ঘরের মাটিতে আয়ারল্যান্ড কিংবা আফিগানিস্তান, কোনো দলের বিপক্ষে সিরিজেই ছিলেন না। 

এমনকি, এরপর এশিয়া কাপের স্কোয়াডেও দলে রাখা হয়নি তাঁকে। যার ফলে অনেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রিয়াদের শেষ দেখে ফেলেছিলেন। তবে রিয়াদ যেন সবাইকে ভুল প্রমাণ করলেন। বিশ্বকাপে এসে দুর্দান্ত খেলে চলেছেন। বিপদের মুহূর্তে হাল ধরে বাংলাদেশের স্কোর সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছেন ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যাটার। সেই মাহমুদউল্লাহই এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার।

ক্রিকেট বা ফুটবল প্রায়ই বলা হয় ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’র কথা। বাংলাদেশের জন্য এবারের বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নামের পাশে এমন তকমা দেওয়া হলে তাতে ক্রিকেট ভক্তদের আপত্তি থাকার কথা নয়।

ফিটনেসের ইস্যুতে দল থেকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। ইয়ো ইয়ো টেস্টে সবার চেয়ে কম ১৭ স্কোর ছিল তাঁর। কিন্তু তারপরেও বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন নিজের ব্যাটিং গুণে। শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহই এখন দলের সবচেয়ে বড় ভরসার প্রতীক হয়ে আছেন। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় হার যখন চোখ রাঙানি দিচ্ছিল, তখন ‘বুড়ো’ রিয়াদের কল্যাণেই মান বেঁচেছে টাইগারদের।

এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ব্যাট হাতে বাংলাদেশের সেরা তারকা রিয়াদই। ১ সেঞ্চুরিসহ করেছেন ১৯৮ রান। গড়টাও চোখে পড়ার মতোই। ৩ ইনিংস ব্যাট করে ৯৯ গড়ে রান করেছেন তিনি। এমনকি রিয়াদের সবচেয়ে বড় সমালোচনার জায়গা ছিল স্ট্রাইক রেট। বিষ্ময়কর হলেও সত্য, দলে ‘মারকুটে’ ব্যাটারদের তুলনায় রিয়াদের স্ট্রাইকরেটই বেশি। যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের ম্যাচে শট খেলেছে, পিকআপ শট, এক্সট্রা কাভারের ওপর ছক্কা, তা যেন দেশের ক্রিকেট ফ্যানদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে।

মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে শতক চারটি, সব কটিই আইসিসির টুর্নামেন্টে। একটি ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। গতকালের শতকসহ বাকি তিনটি বিশ্বকাপে। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে শতক করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এই বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ ফিনিশার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারে ধসের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো মাহমুদউল্লাহকে খেলতে হচ্ছে সম্মানজনক স্কোর তুলতে।

তবে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং পজিশন নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। এখন পর্যন্ত ৩ ইনিংস খেলা এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বিশ্বকাপে ব্যাট করছেন ছয়, সাত ও আট নম্বর পজিশনে। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, মাহমুদউল্লাহ কে একরকম অপচয় করছে বাংলাদেশ। যেখানে দলের ৪০ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট পড়ে যাচ্ছে সেখানে এমন ফিনিশার রেখে কী লাভ!  

বিশ্রামের নামে এশিয়া কাপে সুযোগ না পেলেও নিয়মিত অনুশীলন করতে আসছিলেন মিরপুরে। সেই সময় যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছেন পুরনো রিদমে ফিরতে, যদি একটা সুযোগ হয়। আর ভাগ্য সবসময় পরিশ্রমীদের পক্ষে। 

তাইতো স্রষ্টা হয়তো রিয়াদকে আবারও ফেরার একটা সুযোগ দিয়েছিলেন। সেটা খুব ভালোভাবেই কাজে লাগালেন। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করে যেন প্রমাণ করলেন তিনি বুড়িয়ে যাননি, ফুরিয়ে যাননি।

Link copied!