সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতি ও সভ্যতা বিকাশের মঞ্চে যুগপৎভাবে বদলেছে মানুষের জীবনধারণ ও দৃষ্টিভঙ্গি। পুরনো জায়গায় নতুনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রগতিশীলতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ঐতিহ্যের ভিত্তি প্রস্তরে। সময়ের এই ধারাকে অব্যাহত রাখার তেমনই এক নিদর্শন “জেনারেশন জেড” বা “জেন-জি”।
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে এবং ২০১০ এর দশকের প্রথম দিকে জন্মগ্রহণকারীদের বলা হয় “জেনারেশন জেড” বা সংক্ষেপে “জেন জি”। আরও সুস্পষ্ট করে বলতে গেলে ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত যারা জন্মগ্রহণ করেছন তারা এই প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত। ২০২৪ সালের হিসেবে সবচেয়ে বড় জেড সদস্যের বয়স ২৭, আর সর্বকনিষ্ঠজনের বয়স ১২ বছর।
তারুণ্যকে এখন আর কোনোভাবেই আটকে রাখা যাচ্ছে না। ইন্টারনেটের কল্যাণে পুরো বিশ্ব এখন তাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। জেন-জিরা এখন আলোর গতিতে টেক্সটিং, ইমোজি আর ভিডিও কলে করে চলেছেন প্রেম, ভালোবাসা।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, ২০২৪ সালে জেন-জিদের ডেটিং ডিকশনারিতে কোন কোন শব্দগুলো বেশি আলোচিত ছিল।
গ্যাসলাইটিং (Gaslighting)
জেন-জিদের কাছে গ্যাসলাইটিং শব্দটি বেশ জনপ্রিয়। এটি এক ধরনের কৌশল যেখানে কাছের মানুষটি অপরজনকে নানাভাবে মানসিক দিক থেকে ম্যানিপুলেশন করে। এটি একটি সূক্ষ্ম অথচ ক্ষতিকর রূপ। এটি ব্যক্তির অনভূতি, চিন্তাভাবনা, মতামত ও বাস্তবতাকে সন্দেহগ্রস্ত করতে পারে। কোনো সম্পর্কের মাঝে ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা, নিজেকে বড় এবং অপরজনকে ছোট করা, অপর ব্যক্তির মতামতের অবমূল্যায়ন করাই হলো গ্যাসলাইটিং। অনেকক্ষেত্রে এটি শনাক্ত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
পুকি (Pookie)
আদর করে পছন্দের মানুষ, বিশেষত বন্ধু ও ভালোবাসার মানুষকে “পুকি” ডাকা হয়।
ফেক্সটিং (Fexting)
টেক্সটিং পর তরুণদের প্রেম-ভালোবাসার শব্দকোষে নতুন সংযোজন হয়েছে ফেক্সটিং। ফেক্সটিংয়ের পূর্ণরূপ হলো- ফাইটিং ওভার টেক্সট। এককথায় এর মানে হলো মান-অভিমান, অভিযোগ-অনুযোগের লিখিত পর্ব। মুখোমুখি না করে এখানে ঝগড়া হয় লিখিত বার্তা, ইমোজি-ইমোজি আর গিফি-গিফিতে।
গ্রীন ফ্ল্যাগ (Green flag)
সবুজ পতাকা হল এমন একটি ইতিবাচক, আকাঙ্ক্ষিত গুণ বা আদর্শ আচরণ যা আপনি কারও মধ্যে লক্ষ্য করেন। উদাহরণস্বরূপ, ইনস্টাগ্রাম বা স্ন্যাপচ্যাট হ্যান্ডেলের পরিবর্তে কারও মোবাইল নম্বর চাইতে হবে। অথবা, ভুল হলে অবিলম্বে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।
রেড ফ্ল্যাগ (Red flag)
ন্যদিকে জেন-জিদের কাছে লাল পতাকার মানে একজন ব্যক্তির বিষাক্ত হওয়ার বা সম্পর্কটি ব্যর্থ হওয়ার জন্য নির্ধারিত হওয়ার সতর্কবার্তা হিসাবে দেখা হয়। সম্ভাব্য লাল পতাকার মধ্যে রয়েছে দুর্বল যোগাযোগ বা আপনার সম্মান না করা। অথবা, তিনি যদি অ্যান্ড্রু টেটের ভক্ত হন বা “সিগমা মেল” মানসিকতার সদস্য হন।
ন্যানো-শিপস (Nano-ships)
মনে করুন, সকালে ঘুম থেকে ওঠে ডেটিং অ্যাপের ইনবক্সে ঢুকে দেখলেন, সারা রাত কথা বলা ছেলেটি আড়মোড়া ভাঙার ইমোজি পাঠিয়েছে। সেই ইমোজি যেন আপনার কাছে উষ্ণ আলিঙ্গন রুপে ধরা দিচ্ছে। আবার বিকেলে অফিসের ক্লান্তিকর মিটিং শেষে মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলেন, ইনবক্সে মেয়েটি পাঠিয়েছে এককাপ ধোঁয়া ওঠা কফির ছবি বা ইমোজি। এমন ছোট ছোট প্রচেষ্টা, অনুভূতি বা যত্নগুলো অফলাইনের সম্পর্কে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, অনলাইনের বেলায়ও সেরকম। এগুলোকে বলা হয় ন্যানো শিপস। এগুলোই অনলাইনের দুনিয়া থেকে সম্পর্কটাকে বড় পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে থাকে।
মাইক্রো-ম্যানস ম্যানিয়া (Micro-mance Mania)
ডেটিং অ্যাপ বাম্বল এক জরিপ বলছে, জেন-জিরা এখন খুব কমই একটা সম্পর্ককে সারাজীবন টিকিয়ে রাখার চাপ নিতে চান। বরং তারা স্বল্পস্থায়ী অথচ অর্থপূর্ণ এরকম ছোট ছোট সম্পর্কে আগ্রহী। উদাহারণস্বরুপ, এক বিকেলে আপনি কারও সঙ্গে মন খুলে কথা বললেন। ভালো সময় কাটালেন। কারও সঙ্গে কোথাও থেকে ঘুরে এলেন। সুন্দর একটা সম্পর্ক হলো। এর মানে এই নয় যে এই ব্যক্তির সঙ্গেই আপনি বাকি পুরোটা জীবন কাটাবেন বা কাটাতে পারবেন। এই ধারণাকে বলা হয় মাইক্রো-ম্যানস ম্যানিয়া। যেখানে পরিমাপের চেয়ে গুণগতমানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সফট লঞ্চ (Soft Launch)
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রেমিক-প্রেমিকারা স্বাভাবিকভাবেই তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অনুসারী বা বন্ধুদের তাদের সম্পর্কের কথা জানাতে চায়। কিন্তু কাপল সেলফির দিন তো শেষ। আপনি হয়তো আপনার আর আপনার প্রেমিকার পায়ের ছবি দিলেন বা দুজনে হাত ধরে আছেন, এমন ছবি পোস্ট করলেন। অথবা ছবিতে সঙ্গীর চেহারাকে ঝাপসা করে দিলেন। এভাবে সঙ্গীকে ছবি বা ভিডিওতে পুরোপুরি না দেখিয়ে বুঝার স্বার্থে ‘‘ক্লু’’ দিয়ে, রহস্য রেখে টিজ করাকে বলে সফট লঞ্চ। এর মাধ্যমে আপনি জানালেন, ‘‘আমি একজনের সঙ্গে আছি’’, তবে সে কে, সেটা কাউকে জানানো যাবে না।
সিচুয়্যেশনশিপ (Situationship)
এটি মূলত এমন এক ধরনের সম্পর্ক যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকারা কিছু সময়ে জন্য তাদের পছন্দের তালিকায় কাউকে যোগ করেন এবং ডেট করেন। এক্ষেত্রে তার আবেগময় সংযোগ অনুভব করে এবং সম্ভবত একে অপরের প্রতি অনুভূতি রয়েছে, তবে সম্পর্কের অবস্থা অস্পষ্ট রয়ে গেছে এবং এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ইন্টারন্যাশনাল ডেটিং (International Dating)
নাম দেখেই বুঝতে পারা যাচ্ছে এর মানে কি হতে পারে। তরুণদের প্রেম এখন আর দেশের সীমানায় আটকে নেই। কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ভিন্ন সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক প্রেমই এখন ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে।