জুন ১১, ২০২৫, ০৩:২২ এএম
রূথবা ইয়াসমিন চাঁদের পথে যাত্রায় ইতিহাস গড়তে চলেছেন। `স্পেস নেশন`-এর ‘মুন পায়োনিয়ার মিশন’-এর কঠিন প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করে তিনি এখন চাঁদে পা রাখার প্রতিযোগিতায় সামনের সারিতে। ১৬ এপ্রিল স্পেস নেশন জানায়, তাদের এবারের মিশনে অংশ নেওয়া অধিকাংশই নারী, এবং রূথবা তাদের অন্যতম।
রূথবার শিক্ষাজীবন শুরু ঢাকার স্কলাস্টিকায়। এরপর তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের মাউন্ট হোলিওক কলেজে, যেখানে ২০১৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক এবং গণিতে মাইনর শেষ করেন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় দেশে ফিরে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ডেটা সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আলাবামা থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
মহাকাশীয় আবহাওয়ার ওপর গবেষণা তাঁর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু, বিশেষ করে ‘ভূচৌম্বকীয় ঝড়’ নিয়ে তাঁর কাজ উল্লেখযোগ্য। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস রূথবার অনুপ্রেরণা, যিনি নারীদের জন্য মহাকাশে পথ খুলে দিয়েছেন। রূথবার মতে, “মহাকাশ শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ১১ শতাংশ—এই চিত্র বদলানো দরকার।”
‘মুন পায়োনিয়ার মিশন’-এর প্রশিক্ষণ ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। সেখানে তাকে স্পেসস্যুট পরে EVA (Extra-Vehicular Activity) বা মহাকাশের বাইরে কাজ করা, এবং মিশন কন্ট্রোলের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করার মতো জটিল দক্ষতা আয়ত্ত করতে হয়। এক সিমুলেশনে, একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটির সময় তিনি জরুরি EVA পরিচালনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে মিশন কন্ট্রোলে তিনি আইএসআরইউ (স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার) মডিউলে দিকনির্দেশনা দেন সহকর্মীদের।
এই মিশন রূথবার কাছে ছিল নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও চাপের মুখে টিকে থাকার এক বাস্তব পরীক্ষা। “আমাদের সাফল্য এসেছে প্রস্তুতি, সমন্বয় ও দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে,” বলেন তিনি। তাঁর দল ‘Mag 7’ সফলভাবে এই মিশন সম্পন্ন করে।
মহাকাশে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা রক্ষা করাও ছিল প্রশিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেখানকার পরিবেশে মানিয়ে নিতে ঘুম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পরিচ্ছন্নতার বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার শেখানো হয়।
রূথবার স্বপ্ন শুধু চাঁদে পা রাখা নয়—তিনি চান চাঁদের উপর গবেষণা, নমুনা সংগ্রহ এবং ভবিষ্যতের আর্টেমিস মিশনের মতো বৃহৎ প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে। তাঁর কথায়, “আমি শুধু ইতিহাস গড়তে চাই না, ভবিষ্যতের নারীদের জন্য মহাকাশের পথে পথচলা সহজ করে তুলতে চাই।”