ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০১:৫২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট শাটডাউনের ঘটনা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। সারা দেশ তখন অনলাইন দুনিয়ার বাইরে। যারা স্মার্টফোনে আগে থেকেই অফলাইন গেম নামিয়ে রাখেননি, তারা বাধ্য হয়েছিলেন গুগল ক্রোমের বিখ্যাত ডাইনোসর গেম খেলার জন্য।
গুগল ক্রোমের সেই অফলাইন ডাইনোসর গেমের আদলে তৈরি, নতুন এই স্যাটায়ার গেমে এবার দৌড়াচ্ছেন বাংলাদেশের এক পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছেন এক নোবেলজয়ী, হাতে কাঁটা নিয়ে অপেক্ষায়—যেন সুযোগ পেলেই আঘাত করতে পারেন!
গেমটির নাম—‘দৌড়াও হাসিনা দৌড়াও’। প্রকাশের পর মাত্র এক রাতেই এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে, খেলেছেন ৩ লাখ ৪০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী।
গেমটি তৈরি করেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী তাসরিফ বিন মিজান। তাসরিফ জানান, নতুন একটি গেম ইঞ্জিন নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ করছিলেন। মিমের ধারণা মাথায় ছিলই, তখনই ভাবলেন—কেন না জনপ্রিয় ডাইনোসর গেমের আদলে একটি রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক গেম বানানো যায়! এরপর মাত্র ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় ‘দৌড়াও হাসিনা দৌড়াও’।
তবে তাসরিফ এটিকে কোনো সাধারণ ইন্ডি ধাঁচের গেম বলতে নারাজ। বরং তিনি এটিকে ‘ভাইরাল মিম’ হিসেবেই দেখছেন। তার ভাষায়, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গেম বানালে সেটি কখনোই বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে না। এটি মূলত মজা করার জন্য বানিয়েছিলাম, তবে জানতাম—সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার মতো যথেষ্ট উপাদান আছে এতে।’
গেমে খেলোয়াড়দের কাজ হলো শেখ হাসিনার চরিত্রকে দৌড় করিয়ে কাঁটা হাতে থাকা প্রতিপক্ষের আক্রমণ এড়িয়ে যাওয়া। খেলাটি শুরু হতেই বাজতে থাকে শেখ হাসিনার কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা—‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি, দেবার কিছু নেই; আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।’
পথে সংগ্রহ করতে হয় তার বাবা শেখ মুজিবের ছবি দেওয়া বিশেষ কয়েন। পেছনে উড়তে থাকে ভারতের জাতীয় পতাকা, হাসিনা প্রাণপণে ছুটে চলেন নরেন্দ্র মোদির পেছনে আর তার সম্মুখে কাঁটা হাতে বাধা হয়ে দাড়িয়ে থাকেন প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকা ইউনূস।
তবে গেমের আসল মজা খেলায় হেরে যাওয়ার পর। দৌড়াতে গিয়ে বা কয়েন সংগ্রহ করতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেই শোনা যাবে এক পরিচিত সংলাপ—‘কী অপরাধটা করেছি আমি?’
মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গেমটি সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, এবং এখন পর্যন্ত এটি তিন লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি বার খেলা হয়েছে। তবে এটি শুধু হাসি-তামাশার খোরাক জুগিয়েছে এমন নয়, বরং শুরু হয়েছে বিতর্কও। কারও কাছে এটি নিছক ব্যঙ্গাত্মক বিনোদন, আবার অনেকেই একে অসম্মানজনক বলে মনে করছেন।
তাসরিফ জানালেন, গেম প্রকাশের পর থেকেই তিনি প্রচুর হুমকি পাচ্ছেন—কেউ বলছেন তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে, কেউবা গেমের সাইট হ্যাক করার হুমকি দিচ্ছেন। তবে এ নিয়ে তিনি খুব একটা বিচলিত নন, কারণ এমন কিছু যে ভাইরাল হবেই, তা তিনি আগেই জানতেন।
তবে এত আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও তাসরিফ ভাবছেন আরেকটি নতুন গেম বানানোর কথা। এবার হাসিনাকে দৌড়ানোর বদলে খেলোয়াড়রা হয়তো নতুন কোনো ভূমিকায় থাকবেন!
অবশ্য, এটি কোনো শত্রুতার বার্তা নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক হতাশা ও ক্ষোভের প্রতিচ্ছবি। আর এই কারণেই তাসরিফের মতে, এমন গেমের জনপ্রিয়তা বাড়তেই থাকবে। তাছাড়া, গেমটি ইতোমধ্যেই প্লেয়ারদের কাছ থেকে ২৬ ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ১৪৭ টাকা সমর্থন পেয়েছে, যা ভবিষ্যতে তাসরিফকে আরও বড় কিছু করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
তবে ভবিষ্যতে কি এমন আরও গেম বানানোর পরিকল্পনা আছে? তাসরিফ জানালেন, অনেকেই তাকে নতুন আইডিয়া দিচ্ছেন—কেউ বলছেন এবার শুধু দৌড় নয়, বরং পাল্টা আক্রমণের সুযোগ রাখা হোক! তবে আপাতত, তিনি ফিরতে চান নিজের পছন্দের গেমিং জগতে—স্টিম আর নিন্টেন্ডো সুইচের জন্য আসল গেম তৈরির দিকেই তার মনোযোগ।
‘ভাইরাল হওয়া আর সোশ্যাল মিডিয়া এনগেজমেন্ট পাওয়া আমার ক্যারিয়ারে কোনো কাজে আসবে না। গেমিংয়ের মূলধারার বাজারে কাজ করাটাই আমার লক্ষ্য,’ বলেন তাসরিফ।
সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড