উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ওই উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত অভিযোগপত্রও পাঠিয়েছেন। এতে আরও সাতজন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাক্ষর করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায়।
জানা গেছে, টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ছোট মনিরের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ তোলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার। তিনি দাবি করেছেন, তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির। এ ব্যাপারে তিনি রবিবারই জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ পাঠিয়েছেন। যাতে সই করেছেন জেলার আরও সাতজন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
তবে সংসদ সদস্য ছোট মনির হুমকি দেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে কখনোই হুমকি দেননি। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে হেয় করার জন্য এ অভিযোগ করা হচ্ছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ১০ এপ্রিল জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় গোপালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার তারাকান্দি-ভূঞাপুর যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। এছাড়া হাদিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম তালুকদার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা বিধানের সভায় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীতে সভা শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সংসদ সদস্য ছোট মনির তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এ ব্যাপারে রবিবার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় ইউনুস ইসলাম তালুকদার হুমকির বিষয়টি সভায় উপস্থাপন করেন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী, বাসাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম তাঁদের বক্তব্যে এ ঘটনার নিন্দা জানান। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার দাবি জানান।
ইউনুস ইসলাম তালুকদার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “জীবনে কখনও এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। দুটি ন্যায্য বিষয়ে কথা বলেছি। একটি পরিবার বিচার চাইছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আর অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাধা দিয়েছিলাম। কারণ বাঁধ ভেঙ্গে বর্ষার পানি ঢুকলে এলাকার মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।”
হুমকির ওই ঘটনার বিবরণসহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এই স্মারকলিপিতে জেলার ১২ জন উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে মোট সাতজন সাক্ষর করেন। এরা হচ্ছেন, গোপালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী, বাসাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম, সখীপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল, কালিহাতী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনছার আলী, দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান ও নাগরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম।
এ বিষয়ে জানতে সোমবার দুপুরে সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরকে তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
তবে হুমকি প্রদান প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য ছোট মনির সাংবাদিকদের জানান, গত ১০ এপ্রিল গোপালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কিছু মিথ্যা অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন। সভা শেষে তিনি (সংসদ সদস্য) জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে চলে আসেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে হুমকি দেওয়া দূরের কথা, কোন কথাও হয়নি।
সংসদ সদস্য ছোট মনির আরও বলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সামনে নির্বাচন আসছে। তাই আমাকে হেয় করার জন্য এবং আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব মিথ্যা অভিযোগ করছেন।