আপত্তির মুখে বইমেলা থেকে সরানো হলো স্যানিটারি ন্যাপকিন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম

আপত্তির মুখে বইমেলা থেকে সরানো হলো স্যানিটারি ন্যাপকিন

ছবি: সংগৃহীত

আপত্তির মুখে ‘মব আশঙ্কায়’ বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য স্যানিটারি ন্যাপকিন।

জানা গেছে, নারীদের প্রয়োজন ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বইমেলার একটি কর্নারে প্রাণ- আরএফএল গ্রুপের স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্র্যান্ড “স্টে-সেফ” তাদের স্টলে স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদর্শন ও বিতরণ করে আসছিল। তবে বইমেলায় কেন “গোপন পণ্য” বিক্রি করা হচ্ছে, তা নিয়ে আপত্তি তোলে একটি গোষ্ঠী। এরপর মব পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কায় মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে অন্য কোনো পণ্য স্টলে রাখতে প্রাণ- আরএফএলকে চিঠি দেয়।

এরপর রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটি মেলা থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরিয়ে নেয়। পাশাপাশি বন্ধ রাখা হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্টল দুটি। রবিবার বিকেলে বইমেলায় স্টল দুটি বন্ধ দেখা যায়। কালো কাপড় দিয়ে স্টল ঢেকে রাখা হয়েছে।

বাংলা একাডেমি বলছে, বই ছাড়া অন্যকিছু বিক্রির সুযোগ বইমেলায় নেই বিধায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে “স্টে-সেফ” এর উৎপাদক প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে, মেলায় ন্যাপকিন বিক্রি করা হচ্ছিল, এমন নয়। এটি ফ্রি দেওয়া হচ্ছিল।

এদিকে স্টল থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরিয়ে অন্য পণ্য প্রতিস্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে প্রাণ-আরএফল গ্রুপকে দেওয়া একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ডংকি ড্রিম’র পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাকিব হাসান সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, “আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্রান্ড স্টে-সেইফ বইমেলা প্রাঙ্গণে দুটি স্টল পরিচালনা করে আসছে। প্রথম দিকে কোনো সমস্যা না থাকলেও গত ১১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে বেশ কিছু ইসলামিস্ট গ্রুপ ন্যাপকিনকে গোপন পণ্য বলে আখ্যা দেয়, এবং এর প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা বিক্রি বন্ধের দাবি জানায়। এর পরদিন আরও অনেক মানুষ একই দাবি নিয়ে হাজির হয়। পরে বাংলা একাডেমি পুলিশ, আনসারসহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি ঠান্ডা করা হয়। গতকাল (১৩ ফেব্রুয়ারি) স্টল দুটি খুলে দিলে কিছু গ্রুপ সরাসরি এসে বাংলা একাডেমিতে অভিযোগ করে।”

চিঠিতে আরও বলা হয়, “এদেশে এই মুহূর্তে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মব হচ্ছে। এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য উক্ত স্টল দুটি বন্ধ করা অত্যাবশ্যকীয়। আপনাদের ব্যবসায়িক স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে স্টল দুটি অন্য পণ্য (যেমন শিশুশিক্ষা সরঞ্জাম) দিয়ে প্রতিস্থাপনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে আলোচনা সাপেক্ষে। এমন অবস্থায় উক্ত স্টল দুটি আলোচনা সাপেক্ষে অন্য পণ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করার জন্য জানানো হলো। আপনার বিশেষ সহযোগিতা আমাদের একান্ত কাম্য।”

সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের কাছেও চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ভাইরাল হওয়া চিঠির কপিতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম এর সই দেখা গেছে। সেখানে মহাপরিচালক লিখেছেন, “এই পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনি ওয়াকিবহাল। অতিদ্রুত এ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।”

এ বিষয়ে ডংকি ড্রিম’র পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাকিব হাসান বলেন, “বইমেলায় যেহেতু অনেক নারী আসেন। তাই নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতার কথায় মাথায় রেখে স্টলে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখতে আমরা আপত্তি জানাইনি। কিন্তু পরে কিছু মানুষ এটিকে ‘গোপন পণ্য উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানায়। তাই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বাধ্য হয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ন্যাপকিন সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানাই। পরে তারা তাদের পণ্য সরিয়ে নিয়েছে।”

এদিকে স্টল দুটি বন্ধ রাখার বিষয়ে বাংলা একাডেমির সচিব ও বইমেলা টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান সেলিম রেজা সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে বলেন, “মেলায় অনুমোদন ছাড়া পণ্য বিক্রির জন্য স্টল দুটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি।”  

Link copied!