ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২, ১১:৩৫ এএম
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার গঠনে সার্চ কমিটি থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নামের তালিকা প্রস্তাবের আগে জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আলী রিয়াজ। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি এ দাবি জানান।
যা বলেন তিনি
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনার হতে আগ্রহী হয়ে সাড়ে তিনশো জন আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন। অযৌক্তিতভাবে বয়সের সীমা টেনে না দিলে এই সংখ্যা আরও বেশি হতো বলেই আমার অনুমান। সার্চ কমিটির কাছে ২৪টি রাজনৈতিক দল এবং ৬টি পেশাজীবি সংগঠনের পক্ষ থেকেও নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এর কিছু কিছু নাম শোনা যাচ্ছে। অনেক নামই শোনার পথ সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সার্চ কমিটির কাছে জমা দেয়া এইসব নাম ঐ ব্যক্তিদের সম্মতি নিয়ে জমা দেয়া হয়েছে কীনা আমরা তা জানিনা, কিন্ত দলগুলো নিশ্চয় জানেন তাঁদের দেয়া নামের ভার কতটুকু।
যারা নিজেরা আবেদন করেছেন এবং যাঁদের নাম দেয়া হয়েছে তাঁরা দেশের সেবা করতে আগ্রহী বলেই আমাদের ধরে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে এটা জানার নৈতিক অধিকার নিশ্চয় জনগণের আছে যে এই ব্যক্তিরা কারা। সার্চ কমিটি কোন তালিকা থেকে কাদের নাম শেষ পর্যন্ত পাঠাচ্ছেন সেটাও জানা দরকার। সার্চ কমিটি যদি এই প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে চান তবে প্রথম কাজ হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে এই সব নাম অবিলম্বে প্রকাশ করা, সম্ভব হলে তাঁদের সিভি (যোগ্যতা এবং দক্ষতা) নাগরিকদের সামনে তুলে ধরা। যারা প্রকাশ্যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে আগ্রহী তাঁদের নাম তো গোপনীয় বিষয় হতে পারেনা। বাংলাদেশের বিরাজমান বাস্তবতায় এবং পর পর দুটি কমিশনের দ্বরা রাজনীতির ও নির্বাচন ব্যবস্থার ভয়াবহ ক্ষতির প্রেক্ষিতে এটা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। এটা সরকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরী নয় যে তাঁদের জন্যে স্বাভাবিক গোপনীয়তা অবলম্বনের দরকার। কোন দল কার নাম দিয়েছে সেটা সেভাবেই প্রকাশিত হলে নাগরিকরা বুঝতে পারবেন কোন দল বা পেশাজীবি সংগঠন কোন ধরণের কমিশন চাইছেন।
ইতিমধ্যেই এটাও আমরা জানি যে, সার্চ কমিটি বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এই বৈঠক কেনো সরাসরি সকলের দেখার ব্যবস্থা করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছেনা? এই বৈঠকে কে কী বলছেন সেটাও জানার অধিকার নাগরিকদের আছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরণের বৈঠক ইত্যাদি প্রচারিত হয় ‘সি-স্পেন’ বলে একটি চ্যানেলে। বাংলাদেশে সেই ধরণের চ্যানেল নেই, সরকারী চ্যানেল বিটিভি সেটা করতে পারে। আমি অনুমান করি যে এটা প্রচারের জন্যে উন্মুক্ত করলে অন্য চ্যানেলেরও উৎসাহ থাকবে। তবে সকল চ্যানেলকে ডেকে এই আলোচনাকে জনসভায় পরিণত করার দরকার নেই। সার্চ কমিটি তাঁদের ওয়েব সাইটেই তা প্রচার করতে পারে, যে সব চ্যানেল চাইবে তাঁরা সেখান থেকে প্রচার করবে, যে নাগরিকরা দেখতে চাইবেন তাঁরা সেটা দেখবেন। এই ধরণের প্রযুক্তি এখন সহজে লভ্য। তদুপরি এই ভিডিও বাংলাদেশের ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকবে।
সার্চ কমিটি গঠনের আইন যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, পাশ করা হয়েছে সেগুলো স্বচ্ছতার উদাহরণ হয়নি। রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটি গঠন হবে, এই বিষয়ে আইন করা হবে। কিন্ত পরে জানা গেলো যে, এই আইনের খসড়া তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আলোচনা শুরুর আগেই। এগুলো স্বচ্ছতার উদাহরণ নয়। কিন্ত সেগুলোর দায় এই সার্চ কমিটির নয়। তাঁদের দায় তাঁদের কাজের। এখন এই কমিটি চাইলে তাঁদের কাজের স্বচ্ছতার উদাহরণ তৈরি করতে পারে। কেবল একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে এমন আশা করার ভ্রান্তি আমার নেই। নির্বাচন কেমন হবে সেটা নির্ভর করবে নির্বাচনকালীন সরকার কেমন তার ওপরে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের ওপরে। সেগুলো বিবেচনায় রেখেও এই সার্চ কমিটিকে এটা স্মরণ করিয়ে দেয়াই আমার উদ্দেশ্য – স্বচ্ছতার এবং জবাবদিহিতার একটি সুযোগ আপনাদের সামনে এসেছে। সেটা গ্রহণ করবেন কীনা সেটা আপনাদের সিদ্ধান্ত।