মার্চ ৩০, ২০২১, ০৫:৫৯ পিএম
১৯৭১ সালের ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে ক্ষমা চাইতে পাকিস্তান সরকারকে দেশটির জনগণেরই আহবান জানানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দেশটির সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি।
স্থানীয় সময় সোমবার ব্রাসেলসে বেলজিয়াম ও লুক্মেমবার্গে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত ‘‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিসংবাদিত নেতা’’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্রাসেলসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ’র সঞ্চালনায় ওই ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন হুসেইন হাক্কানি। ভার্চুয়াল আলোচনায় হাক্কানি এদিন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অবিসংবাদিত নেতাকে বিংশ শতাব্দি দেখতে পেরেছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আন্তর্জাতিভাবে সুপরিচিত পাকিস্তানের এই গবেষক বলেন, ‘১৯৭১ সালের হত্যাকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে দেশটির জনগণেরই আহবান জানানো উচিত।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক যুক্তরাস্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান-হাডসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো এবং প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক পরিচালক হাক্কানি বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র সব সময়ের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নন, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠতম নেতাদের একজন এবং বিশ্ব ইতিহাসের এক মহান নেতা। ’বঙ্গবন্ধু মহাত্মা গান্ধী ও নেলসন মেন্ডেলার মতো একই সারির নেতা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করেন হুসেইন হাক্কানি:
∎ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শেখ মুজিবের সংগ্রাম।
∎ ১৯৪৭ সালে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদ ও দুই রাষ্ট্রভাষার একটি হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ‘যুক্তফ্রন্টের’ জয়।
∎ যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙ্গে দেওয়া এবং পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম।
∎ ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি এবং সেনাপ্রধান আইয়ুব খানের ক্ষমতাগ্রহণ।
∎ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি জনগণের ঝাঁপিয়ে পড়া।
পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হাক্কানি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ত্যাগ ও সংগ্রামী মনোভাব বাঙালির হৃদয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছে এবং ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে তিনি স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রস্তুতির জন্য সব নির্দেশনা দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের শাসকদের কাছে পূর্ব পাকিস্তান ছিল ‘সোনার হাঁস’। কারণ পূর্ব পাকিস্তান থেকেই বেশিরভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো তখন।’