রাজধানীর গণপরিবহনে চলছে নজিরবিহীন অরাজকতা। ২০১৫ সালে বেঁধে দেওয়া ভাড়া মানছে না বাস মালিকরা। ফলে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন, তিনগুন ভাড়া। এরমধ্যেই গত ৩ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বরাবরে বাস ভাড়া বাড়ানোর জন্য ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে । এতে ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাসে বাসে যেন ভাড়া আদায় নয়, চলে চাঁদাবাজি।
জানা যায়, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে নির্ধারিত হওয়া প্রতি কিলোমিটারে বাসের ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা ও মিনিবাসের ১ টাকা ৬০ পয়সা হারে আদায় করার কথা থাকলেও রাজধানীর বেশিরভাগ রুটেই বাসযাত্রীদের গুনতে হয় দ্বিগুন ভাড়া।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে তড়িৎ প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন জাহিদুল ইসলাম। কাজের সুবাদে তাকে প্রতিদিনই প্রায় মিরপুর-উত্তরা রুটের গণপরিবহন ব্যবহার করতে হয়। তার অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে।
রাজধানীর মিরপুর-১২ থেকে নিকুঞ্জের দূরত্ব ৮ দশমিক ১ কি.মি.। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্ধারিত চার্ট অনুযায়ী ১৩ টাকা ৭৭ পয়সা ভাড়া হলেও এই রুটে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ৩০ টাকা যা বিআরটিএ নির্ধারিত চার্টের দ্বিগুনেরও বেশি। জাহিদুল ইসলামের মতো আরো অসংখ্য যাত্রীর প্রতিদিন একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এরইমাঝে চলতি মাসের ৩ তারিখে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে বাস ভাড়া বাড়ানোর জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে । ভাড়া বাড়ানোর এই প্রস্তাবনরে সমালোচনা করেছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন চৌধুরী ভাড়া বৃদ্ধিকে ‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, সিটিং সার্ভিসের নামে ইতোমধ্যে যে ভাড়া যাত্রীদের থেকে আদায় করা হয় তা এক প্রকার চাঁদাবাজি। গণপরিবহন ব্যবহার করতে হলে চাঁদা দিতেই হবে। মাঠ পর্যায়ে যারা ভাড়া তদারকির কাজে নিয়োজিত তারা ঠিকমতো কাজ করছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরই বাস মালিকরা কোন না কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব আনে কিন্তু গণপরিবহনে কোন আপডেইট হয় না। আর করোনার এই সময়ে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তই অমানবিক।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ দ্য রিপোর্ট ডটলাইভকে বলেন, ‘গত ৭ বছর যাবত বাস ভাড়াবাড়ানো হয়নি। ২০১৯ সালে ভাড়া পুন:নির্ধারণ কমিটি, যাত্রী কল্যাণ সমিতি, ক্যাব বিআরটিসি, সিটি কর্পোরেশন ও বিআরটিএর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাথে বসে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। সম্প্রতি আরেকটি প্রস্তাবনা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সকল জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আমাদের পাঠানো প্রস্তাব থেকে কিছু কমবেশি করে হয়ত শীঘ্রই নতুন বাস ভাড়ার সিদ্ধান্ত আসবে।‘
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পাঠানো প্রস্তাবনা বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, ফ্র্যাঞ্চাইজি বাসের জন্য বর্ধিত ভাড়া নিয়ে আলাপ হলেও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির প্রস্তাব নিয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্তে আসেনি মন্ত্রণালয়। আগামী ডিসেম্বর থেকে চালু হতে যাওয়া গণপরিবহনের জন্য ২.২০ পয়সা হারে ভাড়ার প্রস্তাব এসেছে। সেটা এমনকি কার্যকর হলেও সকল বাসের জন্য তা প্রযোজ্য হবে না।