বউ ভাড়ার কথা বলছিনা, বলছি শেরওয়ানি ভাড়ার কথা। বিয়ের খরচ বাঁচাতে বিয়ের সামগ্রী ভাড়ায় নিতে পারেন। সাধারণত শীতকাল এলেই বিয়ের হিড়িক পড়ে যায়। এজন্যে শীতকালকে বলা হয়ে থাকে বিয়ের মৌসুম। বিয়ে মানে আনন্দ উল্লাস হলেও বিয়ের কেনাকাটায় চলে যায় অনেক টাকা। অনেকের আবার সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু সখ আহ্লাদ কিন্তু ঠিকই থাকে। সাধারণত শুধু কাবিনের বিয়েতে বর কে তার নিজের টাকাই পোশাক কিনে বিয়ে করতে যেতে হয়। ফলে বর চাইলেই একদিনের জন্য শেরোয়ানি না কিনে, ভাড়া নিতে পারে। বিয়ের সামগ্রী বিক্রির দেকানগুলোতে শেরওয়ানি, পাগড়ি ভাড়ায়ও দেওয়া হয়।
আমাদের দেশে বিয়ে মানেই আনন্দ উৎসব, গেট টুগেদার ,খাওয়া দাওয়া, গান-বাজনা, মজা করা, নতুন কারো সাথে পরিচয় আরও অনেক কিছু। এই সব কিছুর মাঝে গুরুত্বপূর্ণ আর একটি জিনিস হচ্ছে বিয়েতে বর কনের কেনাকাটা । তারা বিয়ের হ্লুদ, মেহেদী কোটা,বিয়ের আগের দিন, বিয়েতে এবং রিসেপশনে কি কি পরবে। তার জন্য কেনাকাটা তো করতেই হবে।
বিয়ের কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত এলিফ্যান্ট রোড সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গায়ে হলুদের ডালা-কুলা থেকে শুরু করে শেরওয়ানি-নাগরা পর্যন্ত সব পাওয়া যায় এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলোতে। এখানে প্রায় ৫০টির মতো শেরওয়ানির দোকান আছে। এগুলোর মধ্যে ১৫টির বেশি দোকানে বিক্রির পাশাপাশি শেরওয়ানি ভাড়া দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, কাপড়ের মান ও ডিজাইনভেদে এ শেরওয়ানিগুলোর ভাড়া দেড় হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা দামের শেরওয়ানি সেট ভাড়া দেওয়া হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকায়। আর ২০-২৫ হাজার টাকা দামের শেরওয়ানি সেট ভাড়া হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। এই ভাড়ার রেট কিন্তু ফিক্সড না। দোকানদারের সাথে দামাদামি করে ভাড়া কমিয়ে নেওয়ার সুযোগও আছে। কয়েকবার ব্যবহারের পর একটি শেরওয়ানির ভাড়া বেশ কমে যায়।
এ বিষয়ে 'ছবিঘর' দোকানের মালিক মাহমুদুল হাসান জনি বলেন, শেরওয়ানি, পাগড়ি ও অন্য সবকিছু মিলিয়ে দুই হাজার টাকা থেকে ভাড়া শুরু হয়। শেরওয়ানির ডিজাইন আর কাজ অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারিত করা হয়। রাজধানী ছাড়াও ভাড়া দেওয়া হয় তবে ঢাকার বাইরে হলে একটু বেশি থাকে ভাড়া। ভাড়ায় নেওয়া পোশাক ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে হয়।
ভাড়া নেওয়ার সময় চুক্তিতে নির্দিষ্ট করা দিনের চেয়ে বেশী সময় পর শেরওয়ানি সেট ফেরত দিলে মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় জরিমানা হিসেবে বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ভাড়া ব্যতীত শেরওয়ানি ও পাগড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় জামানত হিসেবে অতিরিক্ত টাকা জমা রাখা হয়। শেরওয়ানি সেট ফেরত দিতে আসার সময় এই টাকা দিয়ে দেয়া হয় গ্রাহককে। ফলে আর চিন্তা থাকে না গ্রাহক কিংবা দোকানদারের। তবে জিনিসের কোনো ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে জামানতের টাকা পুরোটা বা কিছু অংশ রেখে দেওয়া হয়।
শেরওয়ানি ভাড়ায় নিতে আসা এক গ্রাহক আলমগির হোসেন দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ' শেরওয়ানি অনেক ভারি কাজের হয়। তাই বিয়ের পরে আর পরা যায়না। একদিন পরার জন্য এত টাকা দিয়ে বিয়ের কাপড় কেনার কোন মানেই হয়না তাই আমি ভাড়া নিচ্ছি। এতে আমার সখ পুরণ হবে পাশাপাশি টাকাও বাঁচবে।
ভাইয়ের জন্য শেরোয়ানি ভাড়া নিতে শ্যাওড়াপাড়া থেকে এসেছেন আছিয়া আক্তার। আলাপকালে তিনি বলেন, জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন হচ্ছে বিয়ে। আর এই দিনে বিশেষ সাজ-পোশাকে কেউ কমতি করতে চায় না কখনো। কিন্তু সাধ্যের মধ্যে সবটুকু খায়েশ মেটানোর সুযোগ কয়জনের আর হয়! শুধু একদিনের জন্য এত খরুচে কেনাকাটা করা অপচয়ও বটে। একদিনে পড়ার জন্য ২০/২৫ হাজার টাকায় একটা শেরওয়ানি না কিনে ২৫০০ টাকায় একটা ভাড়ায় নিলাম। একটু খরচ কমালাম আরকি। সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারা যায় সেটাই করছি ভাইয়ের জন্য।'
এলিফ্যান্ট রোডের 'বিয়ের কেনাকাটা' নামের দোকানের ম্যানেজার জুবাইদাল হাসান সানি বলেন, "আমি ১২ বছর ধরে বিয়ের পোশাক বিক্রি করে আসছি। সকল শ্রেনী-পেশার মানুষকে দেখেছি। যারা অনেকেই বিয়ের শেরওয়ানি কিনতে এসে ভাড়া নিয়ে গেছেন। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত সবারই বিয়ের শেরওয়ানি কেনার চেয়ে ভাড়া নেওয়ায় আগ্রহ বেশী।"
সম্প্রতি মেয়েদের জামা-কাপড়-গয়নাও ভাড়া দিচ্ছে অনেক দোকান। এ বিষয়ে কথা হয় সাজঘর ওয়েডিং গ্যালারির মালিক খলিল পাটওয়ারীর সাথে। তিনি জানান, তারা বিয়ের শাড়ি, গয়না, লেহেঙ্গা, ওড়না , শেরওয়ানি, পাগড়ি, তলোয়ার ইত্যাদি যাবতীয় জিনিস ভাড়া দিয়ে থাকেন। সরাসরি কিংবা অনলাইনে এই সকল জিনিস ভাড়া দেওয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, লেহেঙ্গার কাপড়, কাজের মান ও দামভেদে ভাড়ার হেরফের হয়। তিন থেকে পাঁচ দিনের জন্য লেহেঙ্গার ভাড়া নেয়া হয় দুই থেকে ২০ হাজার টাকা। ভাড়া দেওয়ার সময় পরিচিত মানুষ না হলে জামানত হিসেবে চার-পাঁচ হাজার টাকা জমা রাখা হয়।
পুরো পৌষ-মাঘ যেন বিয়ের জন্য উৎসর্গকৃত। সারা বছর যতগুলো বিয়ে হয় তার সবগুলো একসঙ্গে করলেও এদুমাসের ধারের কাছেও পৌছাতে পারবে কিনা বলা মুশকিল। অতিরিক্ত খরচ না করে বিয়েতে মনমতো সাজসজ্জা করার কার্যকর উপায় হতে পারে বিয়ের সামগ্রী ভাড়ায় নেওয়া। নব্বইয়ের দশক থেকেই অনেক দোকানে বিয়ের শেরওয়ানি, পাগড়ি, নাগরা, ওড়না, মালা ভাড়া দেয়ার রীতি শুরু হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।