সিইসি নূরুল হুদার মিথ্যাচারে আমরা স্থম্ভিত: সুজন সম্পাদক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ২৯, ২০২২, ১০:০৮ পিএম

সিইসি নূরুল হুদার মিথ্যাচারে আমরা স্থম্ভিত: সুজন সম্পাদক

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম  নূরুল হুদার মিথ্যাচারে আমরা স্থম্ভিত বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে যৌক্তিক সমালোচনার যুৎসই জবাব না থাকলে সমালোচনাকারীর চরিত্র হননের অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া বহুল ব্যবহৃত একটি  অপকৌশলে লিপ্ত হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

 

শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় সুজন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার মিথ্যচারের প্রতিবাদ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চ্যূয়ালি যুক্ত হয়ে  এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত 'আরএফইডি টক উইথ কে এম নুরুল হুদা' শীর্ষক অনুষ্ঠানে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগসহ কিছু কুরুচিপূর্ণ, অশালীন, অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন। দেশের মর্যাদাপূর্ণ একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে বসে তাকে এমন মিথ্যাচার করতে দেখে আমরা হতবাক।

বক্তব্যে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ড. বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনোদিন ছিলও না। তিনি কমিশন থেকে কখনো কোনো কাজ নেননি, অসমাপ্ত রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। অর্থাৎ ড. মজুমদারের বিরুদ্ধে, সিইসির নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কান কথার ভিত্তিতে উত্থাপিত, ১ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ এবং কাজ নিয়ে কাজ না করার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাই সিইসি হুদাকেই এসব অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। একইসঙ্গে জবাব দিতে হবে: তার কাছে এ সম্পর্কে কোনোরূপ তথ্য থাকলে তিনি কেন তা প্রকাশ করলেন না? কেন অভিযোগটি  তদন্ত করলেন না? দুর্নীতি দমন কমিশনেই বা কেন তা পাঠালেন না?

২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় হলফনামায় বর্ণিত প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ ও ভোটারদের মধ্যে বিতরণ, পোস্টারিং এবং প্রার্থী-ভোটার মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজনের কাজটি করার জন্য ড. শামসুল হুদা কমিশন ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এসইএমবি প্রকল্প থেকে সুজনকে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা দিয়েছিলেন।

২০১২ সালের  জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একই ধরনের কাজের জন্য সুজনকে ৩ লাখ দেয়। অর্থাৎ দুটি নির্বাচনে সর্বমোট ১২ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা সুজন নির্বাচন কমিশন থেকে পায়। নির্বাচন দুটির জন্য নির্ধারিত কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করে যথাসময়ে কমিশনের কাছে বিল-ভাউচারসহ হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে কোনোরূপ অনিয়মের অভিযোগ ওঠা সম্পূর্ণ অমূলক, জানায় সুজন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিইসি হুদা আরও অভিযোগ করেছেন, ড. মজুমদার কমিশন থেকে কাজ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং এ লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করতে অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক লোক নিয়ে তার অফিসে হাজির হয়েছেন। তার এ মিথ্যাচারে আমরা স্থম্ভিত।

নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ীই সুজন নেতারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলেন এবং তা পদ্ধতিগতভাবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেই।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, হলফনামার মাধ্যমে প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা এখন আইনে অন্তর্ভুক্ত। আইনুযায়ী এসব তথ্য না দিলে কিংবা তথ্য গোপন করলে বা ভুল তথ্য দিলে প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার কথা এবং তথ্য গোপন করে নির্বাচিত হলে নির্বাচনও বাতিল হওয়ার কথা। তাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো হলফনামার তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা, যাতে হলফনামা সত্যিকারার্থে 'আমলনামায়' পরিণত হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিদেরকে নির্বাচনী অঙ্গন থেকে দূরে রাখে, যা করতে নূরুল হুদা কমিশন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এসব তথ্য প্রকাশ, প্রচার ও বিশ্লেষণের জন্য সুজনকে যেখানে বাহবা দেওয়ার কথা, তার পরিবর্তে সিইসি হুদা তার মন্তব্যে আমাদের কাজের প্রতি চরম তাচ্ছিল্য এবং সুজনের প্রতি অন্ধ বিদ্বেষ প্রদর্শন করেছেন। একইসঙ্গে প্রদর্শন করেছেন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সম্পর্কে তার এবং তার সহকর্মীদের সুস্পষ্ট ধারণার অভাব, যা এসব গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য তাদের অযোগ্যতারই পরিচায়ক।

সুজন আরও বলে, গত কিছু দিন ধরে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য যোগ্যতা-অযোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে অনেক বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিইসি নূরুল হুদা ও তার সহকর্মীদের আচরণ আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, এসব পদের জন্য শুধু নাগরিকত্ব, বয়স ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাই যোগ্যতার গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি নয়, এগুলোর জন্য আরও বড় যোগ্যতা হলো সততা, সাহসিকতা, প্রজ্ঞা ও নিরপেক্ষতা তথা ব্যক্তির সুনাম। দুর্ভাগ্যবশত, নুরুল হুদা কমিশনের এসব গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতার ঘাটতির মাসুল পুরো জাতিকে আজ দিতে হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সিইসি হুদার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগের আরেকটি কারণ হলো যে, তিনি এবং তার সহকর্মীরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের ভোটাধিকার হরণ করেই ক্ষান্ত হননি, তারা আমাদের ভবিষ্যতের নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে একটি 'ট্রোজান হর্স'ও রেখে যাচ্ছেন। এই ট্রোজান হর্সটি হলো ইভিএম নামে পেপার ট্রেইল বিহীন একটি নিম্নমানের যন্ত্র, যা  দিয়ে ডিজিটাল জালিয়তি করা যায় এবং টেকনিক্যাল উপদেষ্টা কমিটির প্রধান হিসেবে প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী যেটি কেনার সুপারিশে স্বাক্ষর করেননি।

গত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে ডিজিটাল জালিয়তি করা হয়েছিল ২ বার ভোটের ফলাফল প্রকাশ করার মাধ্যমে-উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়,  অন্যান্য দেশ, এমনকি তথ্য-প্রযুক্তিতে উন্নত দেশও যখন ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসছে, তখন এ ভয়াবহ যন্ত্র ব্যবহারে সিইসি হুদার অতি উৎসাহ এবং রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্য ছাড়া ইভিএম ব্যবহার না করার অঙ্গীকার থেকে সরে আসা লক্ষণীয় ও প্রনিধানযোগ্য।

Link copied!