এপ্রিল ১৩, ২০২২, ১০:৪৬ এএম
বাংলাদেশে হত্যা, গুম ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলেও তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহিতা করতে হয় না। এসব ঘটনায় খুবই কম সংখ্যক ক্ষেত্রে তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ সরকার।
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে গুম, হত্যা, ঘুষ, দুর্নীতি ও নিপীড়নসহ নানা ধরণের অভিযোগ থাকলেও এজন্য তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। খুব কম সংখ্যক অভিযোগ তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার।
মাকিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা থাকলেও বর্তমানে দেশটিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ন্যস্ত রয়েছে বেশিরভাগ ক্ষমতা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জয় পেয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন শেখ হাসিনা। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ি ওই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। ওই নির্বাচনে ব্যালট বক্স ছিনতাই, বিরোধী প্রার্থীদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ভোটার ও পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পুলিশ ও র্যাব ছাড়াও সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরে অধীনে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরে বেসামরিক কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের ওপর নানা ধরণের নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেকগুলো গ্রহণযোগ্য খবর রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি হত্যাকাণ্ড; গুম; অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ; রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার; বিচারবিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা; ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর বেআইনি হস্তক্ষেপ; বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ; সাংবাদিকদের অযৌক্তিকভঅবে হয়রানি বা গ্রেপ্তার; বিরোধী দলের কর্মী, সমর্থক ও নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার বা বিচারের মুখোমুখি করা; ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ; শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সমিতির স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও রোহিঙ্গা শরণাথীদের স্বাধীনভাবে চলাচলে হস্তক্ষেপ, সরকারি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি; দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে হয়রানি বা সংগঠনগুলোর ওপর বিধিনিষেধ; গৃহনির্যাতন, যৌন নির্যাতন, শিশু নিপীড়ন, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়েসহ অন্যান্য ক্ষতিকর চর্চা ; ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি; তৃতীয় লিঙ্গসহ ভিন্ন লৈঙ্গিক আচরণের মানুষের ওপর সহিংসতা এবং শিশু শ্রম নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে।