জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাবির ১২২ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের হামলায় জড়িত: তদন্ত প্রতিবেদন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ১৩, ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম

জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাবির ১২২ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের হামলায় জড়িত: তদন্ত প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সংঘটিত সহিংসতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২২ জন শিক্ষার্থীর জড়িত থাকার অভিযোগ সনাক্ত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি।

বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তা উপস্থাপন করা হবে।

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুজন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি কোন ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারে না। তবে কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

তদন্ত কমিটি আরও অনেক ছাত্রের জড়িত থাকার বিষয় সনাক্ত করেছে। যারা সাবেক শিক্ষার্থী। এসব ব্যক্তিদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে তাদের একাডেমিক সনদ বাতিল করার কথা বিবেচনা করতে পারে।

কমিটির আহ্বায়ক আরও জানান, কমিটি ক্যাম্পাসের বহিরাগত কিছু আক্রমণকারীকে চিহ্নিত করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

মাহফুজুল হক সুজন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে সহিংসতাকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে: নারী শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের এমার্জেন্সি বিভাগে আহত শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ, এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ।

কমিটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভিডিও প্রমাণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া, এবং ক্যাম্পাস পোর্টাল থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে তদন্ত চালিয়েছে বলে জানান আহ্বায়ক।

আহ্বায়ক বলেন, “আমরা ভিডিও প্রমাণ পর্যালোচনা করার সময় বিভিন্ন ডিজিটাল ফ্যাক্ট-চেকিং টুল ব্যবহার করেছি যাতে কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে মিথ্যা অভিযোগে শিকার হতে না হয়।”

তিনি আরও জানান, সংগৃহীত প্রমাণ অনুযায়ী সহিংসতা শুধুমাত্র ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ ছিল না, বরং একটি পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ ছিল।

তদন্ত কমিটি একটি প্রেস রিলিজে বলেছে, “২০২৪ সালের ১৫ জুলাই আক্রমণের সবচেয়ে নিন্দনীয় দিক ছিল নারী শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের এমার্জেন্সি বিভাগে আহত শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ, এবং এমার্জেন্সি বিভাগে আহতদের চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত করা।”  

তবে কমিটির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে কোন ফুটেজ পাননি বলে জানান। কারণ সব হার্ড ড্রাইভ সরিয়ে ফেলা হয়েছে।  

সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের উত্তরে কমিটির আহ্বায়ক জানান যে, বাসে আশ্রয় নেওয়া নারী শিক্ষার্থীদের উপর যৌন হয়রানি এবং আক্রমণের ঘটনা হতে পারে যখন আক্রমণকারীরা তাদের ওপর আক্রমণ করেছিল। তবে এর সাথে সম্পর্কিত কোন নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবুও প্রতিবেদনে নারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্তের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদন পাওয়ার পর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর গণঅভ্যুত্থানের সময় আক্রমণ একটি বর্বরোচিত ঘটনা ছিল, যা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নয়, পুরো দেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায়।”

তিনি আরও বলেন, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি প্রমাণ সংগ্রহের সময় বৈজ্ঞানিক মানদণ্ড অনুসরণ এবং বিচারিক পক্ষপাতিত্ব বজায় রাখতে চেষ্টা করেছে।

২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে। কমিটিকে প্রাথমিকভাবে ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

Link copied!