সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ১৭০ মণ ইলিশ ধরেছেন এক জেলে। বলা যায়, এক টানেই ভাগ্য খুলে গেছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা–সংলগ্ন রামগতি এলাকার জেলে আবুল খায়েরের। ইলিশ পেয়েছেন ১৭০ মণ, যা বিক্রি করে পেয়েছেন ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা।
জেলে আবুল খায়ের জানান, তিনি মাছের ব্যবসা করতে গিয়ে ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েন। যে কারণে স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে তিনি ৮ লাখ টাকা ধার নিয়ে জ্বালানি ও প্রয়োজনীয় খাবার কিনে সাগরে মাছ ধরতে রওয়া দেন। একবার জাল ফেলার পর তুলতে গিয়ে দেখেন, জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। মৎস্যবন্দর মহিপুরে মিঠুন মৎস্য আড়তে আসার পর মাছ মেপে দেখেন ১৭০ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে।
আবুল খায়েরের ট্রলারটির নাম ‘এফবি রিভারমেট’। এই ট্রলারটিতে ছিলেন স্থানীয় ইউনুস মাঝি। তিনি জানান, ইলিশ ধরার জন্য ২০ আগস্ট রামগতি থেকে সাগরে ট্রলার ভাসান তাঁরা। ২৩ আগস্ট সকালে জাল ফেলেন। এদিন বিকেলে জাল তোলেন, এ সময় প্রচুর ইলিশ মাছ পান। এরপর তাঁরা মহিপুর মৎস্য বন্দরের উদ্দেশে রওনা করেন। গত শনিবার দুপুরে তাঁরা মহিপুরে পৌঁছান।
জেলে আবুল খায়েরের জালে বিভিন্ন আকারের ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। এর মধ্য ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ রয়েছে ৫৭ মণ। ৪২ হাজার টাকা দরে এর দাম হয়েছে ২৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬৮ মণ। ৩৩ হাজার টাকা দরে দাম হয়েছে ২২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। তিনটিতে এক কেজি হয়, এমন আকারের ইলিশ ধরা পড়েছে ৯ মণ। ২৭ হাজার টাকা দরে এই ৯ মণের দাম হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ১ কেজি থেকে ১ হাজার ২০০ গ্রামের মধ্যে ইলিশ ধরা পড়েছে ১ মণ। এর দাম হয়েছে ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। ধরা পড়া ইলিশগুলো ট্রলারে সঠিকভাবে সুরক্ষা করতে না পারায় ৫০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের পাম (পচা) ইলিশ হয়েছে ৩৫ মণ। ১৫ হাজার টাকা দরে এর দাম হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) ও ইলিশ গবেষক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবার দেরিতে ইলিশ আহরণ শুরু হয়েছে। তা ছাড়া দক্ষিণাঞ্চল, বিশেষ করে, ইলিশের বড় অবতরণ কেন্দ্র মহিপুর-আলিপুর সংলগ্ন কুয়াকাটা থেকে ঢালচর পর্যন্ত সাগর সীমানায় মহিসোপান দীর্ঘ। এ ছাড়া এলাকাটি পাললিক হওয়ায় নদীর সঙ্গে সাগরের সংযোগ ক্যানাল বা চ্যানেল পলি পড়ে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। যার কারণে পরিবর্তিত চ্যানেল অভিপ্রায়ণশীল (মাইগ্রেশন) ইলিশের চিনে উঠতে সময় লাগছে। অচেনা পথে ইলিশ অভিপ্রায়ণে কিছুটা বাধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’