চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত (৮ মাসে) ৩ হাজার ৫৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ৩১৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৫ হাজার ১৭২ জন।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। কোয়ালিশনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশে ৩৫৬২ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩১৭ জন নিহত এবং ৫১৭২ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশের তথ্যমতে, ২০২২ সালে দেশে ৫০৮৯ টি রোডক্র্যাশে ৫৬৩৬ জন নিহত এবং ৪৪৪৪ জন আহত হয়। আর ২০২১ সালে ৫৪৭২ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০৮৪ জন নিহত এবং ৪৭১৩ জন আহত হয়। নিরাপদ সড়ক চাই-এর তথ্যমতে ২২ সালে দেশে ৭০২৪ টি দুর্ঘটনায় ৮১০৪ জন নিহত এবং ৯৭৮৩ জন আহত হয়। আর ২০২১ সালে ৪৯৮৩টি দুর্ঘটনায় ৫৬৮৯ জন নিহত এবং ৫৮০৫ জন আহত হয়।
অথচ জাতিসংঘ স্বীকৃত ‘সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের (নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ মোটরযান, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী, এবং রোডক্র্যাশ পরবর্তী কার্যকর ব্যবস্থাপনা) সমন্বয়ে একটি পৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে রোডক্র্যাশের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ ব্যবহার করে রোডক্র্যাশ কমানো সম্ভব হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরও সড়ক দুর্ঘটনার সার্বিক হার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। অথচ এসব অনাকাঙ্খিত মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই কতটা আন্তরিক প্রশ্ন থেকে যায়। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য উন্নত দেশগুলো সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের (মাল্টিমডাল ট্রান্সপোর্টেশন, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী ও রোডক্রাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা) আলোকে নিজেদের আইনি ও নীতি কাঠামো প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নে সুফল পেয়েছে। তারপরও আমাদের বর্তমান আইনি ও নীতি কাঠামোতে এ দর্শন সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত।
অপরদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় রোডক্র্যাশে। প্রতিদিন প্রাণ হারায় ৩ হাজার ৫০০ জন ও প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ জন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে। অর্থাৎ বিশ্বে তরুণরা যেসব কারণে বেশি হতাহত হন তার মধ্যে রোডক্র্যাশ সবার শীর্ষে। এ প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে রোডক্র্যাশে প্রতি বছর প্রাণহানি হয় আনুমানিক ২৫ হাজার মানুষের। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরেও রোডক্র্যাশের সার্বিক হার কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। অথচ এই সকল অনাকাংখিত মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলে কতটা আন্তরিক প্রশ্ন থেকে যায়।
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, আমাদের বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত সড়কে পরিবহনের জন্য আইন এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধিমালা। তাই পরিবহন ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি এ আইনে সাম্প্রতিক সংশোধনীর সময়ে গতি নিয়ন্ত্রণ, হেলমেট ও সিটবেল্টের মতো কিছু বিষয় সংযোজন করা হলেও তা সড়কে রোডক্র্যাশের কারণে মানুষের মৃত্যু ও বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষার করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। সুতরাং সড়কে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে নিরাপদ সড়ক সংক্রান্ত আলাদা আইন প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের সকলের আশু পদক্ষেপ কামনা করছি।
তবে আশার কথা হলো, বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় গৃহীত বাংলাদেশ রোড সেইফটি প্রকল্পে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের কিছু ব্যবহার শুরু হয়েছে। আমরা এ বিজ্ঞানভিত্তিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে নিরাপদ সড়কের জন্য আলাদা আইনি কাঠামোর জোর দাবি জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ-এর সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষ থেকে ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম খালিদ মাহমুদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক (রোড সেফটি) ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁঞা, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান, সিআইপিআরবির পরিচালক ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের হেলথ সেক্টরের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান, ইমপ্রেসিভ কমিউনিকেশন লিমিটেড (আইসিএল) এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর খন্দকার হাসিবুজ্জামান, এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে সহকারী অধ্যাপক বজলুর রহমান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পক্ষে সিফাত ই রাব্বানী এবং স্টেপস্ টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট এর চন্দন লাহিড়ীসহ কোয়ালিশনের অন্যান্য নেতারা।